শীতের আগমন ও বাড়তি শীতলতার অনুভূতি
নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আমাদের দেশে শীতের আগমন শুরু হয়ে গেছে। যদিও সবারই শীতপ্রিয় অনুভূতি, তবে বছরের এই সময়ে শীতের প্রকোপ আমাদের কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে, যেমন পঞ্চগড়ে, তাপমাত্রা অনেকটা কমে গেছে—এখন সেখানে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। যদিও এখনো শৈত্যপ্রবাহের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি, তবে আবহাওয়ার যে পরিস্থিতি, তাতে শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। শৈত্যপ্রবাহ
কেমন হবে শৈত্যপ্রবাহ?
শীতের তীব্রতা নিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে, তবে এক সপ্তাহের মধ্যে এর কোনো বড় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফিনজাল ঘূর্ণিঝড়, যা সাগরে অবস্থান করছে, কিছুটা তাপমাত্রা কমিয়ে দেবে, তবে তা শৈত্যপ্রবাহের মতো প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, “এখন তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে, কিন্তু শৈত্যপ্রবাহে যাওয়ার মতো তীব্রতা নেই।”
শীতের তাপমাত্রা কোথায় কমছে?
দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। তেঁতুলিয়া, রংপুর, রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, যা শীতের আসন্ন আসার ইঙ্গিত দেয়। তবে, এটি একবারে বড় কোনো তীব্র পরিবর্তন নয়, বরং ধীরে ধীরে শীত আসছে, এবং এটি বড় ধরনের শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস হিসেবেই ধরা হচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহ
শৈত্যপ্রবাহ কখন এবং কোথায় হবে?
এখনই শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই, তবে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণত শৈত্যপ্রবাহ হলে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলে এর প্রভাব পড়ে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ সাধারণত একটু পরে পৌঁছায়। সেই হিসাবে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই অঞ্চলের কিছু এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
এটি যে শুধু শীতের মৌসুমে তাপমাত্রা কমছে, তেমনটা নয়, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের আবহাওয়ার ধরনকেও অনেক পরিবর্তন করে দিচ্ছে। শীতকাল আগে যেখানে স্বাভাবিকভাবে শুরু হতো, এখন সেখানে পরিবর্তন আসছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ হচ্ছে, এবং শীতের সময়কালও আগের মতো একঘেয়েমি নেই। কোথাও একদম শীত, কোথাও মৃদু, আবার কোথাও আর্দ্রতা বেশি। জলবায়ু পরিবর্তন এই আবহাওয়া অস্থিরতার পেছনের কারণ। পৃথিবী উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই শীতকালও আরো বেশি অনিশ্চিত হয়ে উঠছে, যা মানুষের জীবনযাত্রা এবং কৃষির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
শীতকালীন প্রস্তুতি এবং সমাধান
আমাদের দেশে শীতকাল আসলেই মানুষজন শীত বস্ত্র, গরম কাপড় সংগ্রহ শুরু করে। তবে অনেক পরিবার এবং শিশুদের জন্য শীত খুবই কষ্টকর হতে পারে। বিশেষ করে গ্রামের বা দরিদ্র জনগণের জন্য শীত অনেক সময় দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়ায়। শীতকালীন প্রস্তুতি হিসেবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও আগেভাগে শীতবস্ত্র বিতরণের কাজ শুরু করেছে, তবে এ উদ্যোগ আরো ব্যাপকভাবে নেয়া উচিত।
শৈত্যপ্রবাহের সময়, বিশেষ করে বয়স্ক এবং অসুস্থ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। ঠাণ্ডায় বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট বা শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং, আমাদের সবার উচিত শীতের প্রকোপ বাড়ার আগেই সতর্কতা গ্রহণ করা, গরম কাপড়, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
উপসংহার: জলবায়ু পরিবর্তন এবং শীতের আসন্ন চ্যালেঞ্জ
শীত আসছে, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতকালও আগের মতো একঘেয়েমি নয়। তাপমাত্রার ওঠানামা, শৈত্যপ্রবাহের আগমন ও একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবর্তনকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। শীতকালীন তীব্রতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের সাথে মানিয়ে চলা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।