32.3 C
Bangladesh
শুক্রবার, জুন ৬, ২০২৫
spot_img

ঢাকার বায়ুদূষণ: শীত আসতেই বাড়ছে কাশি ও শ্বাসকষ্ট—কীভাবে বাঁচবেন?

ঢাকার বায়ুদূষণ দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে, আর এর প্রভাব পড়ছে শহরের বাসিন্দাদের শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্যেও। কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানির মতো রোগ এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীত আসতেই দূষণ আরও বেড়ে গেছে এবং এতে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। এই পোস্টে আমরা ঢাকার বায়ুদূষণের কারণ, এর ফলে হওয়া শারীরিক সমস্যা এবং সমাধানের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ঢাকার বায়ুদূষণ: ভয়াবহ পরিস্থিতি

২৮ নভেম্বর, ২০২৪, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা। ঢাকার আগারগাঁওয়ে যক্ষ্মা হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের ভিড়। শীতকালে এসব হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ে—বিশেষত শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, কিংবা যক্ষ্মার মতো রোগে আক্রান্তরা আসেন। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, বায়ুদূষণের কারণে রোগী সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।

বিশ্বজুড়ে বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা আইকিউএয়ার জানাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে ঢাকার বায়ু ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার বায়ু প্রায়ই পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় উঠে আসে। গেল নভেম্বরের ২২ তারিখে, ঢাকার বায়ু ছিল বিশ্বের ১২৫টি শহরের মধ্যে তৃতীয়। প্রথম দুটি ছিল পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের নয়াদিল্লি।

কেন বাড়ছে বায়ুদূষণ?

ঢাকায় বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলো প্রায় সবার কাছে পরিচিত। শহরের রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, খোঁড়াখুঁড়ি কিংবা নির্মাণকাজ চলছে, যার ফলে ধুলাবালু অনেক বেশি ছড়াচ্ছে। এছাড়া, পুরনো যানবাহনগুলো, বিশেষত বাস ও লেগুনাগুলো, যেগুলো কালো ধোঁয়া ছেড়ে চলাচল করে, এগুলোও বায়ুদূষণের একটি বড় উৎস। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ঢাকার নির্মাণকাজ, পুরনো যানবাহন এবং বর্জ্য পোড়ানো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বায়ুদূষণের বেশিরভাগ কারণ হলো:

  • নির্মাণকাজ: রাস্তা ও ভবন নির্মাণের ফলে ধুলাবালু ছড়ায়।
  • পুরনো যানবাহন: পুরনো বাস, লেগুনা, গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়।
  • বর্জ্য পোড়ানো: রাস্তার পাশে বর্জ্য পোড়ানো হয়, যা বায়ু দূষণ বাড়ায়।
  • কারখানা ও ইটভাটা: বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ইটভাটা থেকে উড়ন্ত ধোঁয়া এবং গ্যাস বায়ুদূষণ ঘটায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, ঢাকার বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (PM 2.5), সালফার ডাই-অক্সাইড এবং ব্ল্যাক কার্বন এর পরিমাণ বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে।

বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব

বায়ুদূষণ শুধু আমাদের পরিবেশের ক্ষতি করছে না, এটি মানুষের স্বাস্থ্যেও গুরুতর প্রভাব ফেলছে। শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাঁপানি এবং দীর্ঘমেয়াদী বক্ষব্যাধি এখন সবার সমস্যার মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে শীতে, যখন বায়ু আরও দূষিত হয়, তখন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ে। যক্ষ্মা হাসপাতাল এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শীতকালীন সময়টাতে রোগী সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। গত নভেম্বরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ৩৮০ থেকে ৪৫০ জনের মধ্যে পৌঁছেছিল।

এছাড়া, বিশ্বব্যাংক এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বায়ুদূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে ২,৭২,০০০ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৫৫% মৃত্যুই বায়ুদূষণের কারণে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কাটাতে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

বায়ুদূষণের সমাধান: সরকার ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বায়ুদূষণ কমাতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, কিন্তু তেমন বড় ফলাফল এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। তবে নতুন বাংলাদেশে টেকসই পরিবেশ ও রূপান্তর (বেস্ট) নামক একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে, যার মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকও এই প্রকল্পে ২৫ কোটি ডলার অর্থায়ন করছে।

অন্যদিকে, ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট নামে একটি নতুন প্রকল্পও শুরু হয়েছে, যার লক্ষ্য ঢাকার বায়ু মান উন্নত করা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বায়ুদূষণ কমাতে সরকারের পাশাপাশি জনসাধারণের সচেতনতা এবং প্রযুক্তির ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব?

ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে:

  • ফিটনেস পরীক্ষায় গতি আনা: ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
  • নির্মাণকাজে ধুলাবালু নিয়ন্ত্রণ: নির্মাণস্থলে ধুলাবালু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • পোড়া ইটের ব্যবহার বন্ধ: সরকার কর্তৃক পোড়া ইটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত।
  • বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করা: নগরীজুড়ে বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া, ঢাকার সড়কে নিয়মিত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা এবং পুরনো কারখানাগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

উপসংহার: একসঙ্গে কাজ করলে সমাধান সম্ভব

ঢাকার বায়ুদূষণ একটি বড় সমস্যা, তবে তা একদিনে সমাধান হওয়ার মতো কিছু নয়। সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি জনগণের সহযোগিতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। শুধু তাই নয়, যদি সবাই একসঙ্গে কাজ করি, তবে ঢাকার বায়ু আরও শুদ্ধ করা সম্ভব।

ঢাকার বায়ুদূষণ কাটানোর জন্য যদি আমাদের একত্রিত হতে হয়, তাহলে এখনই সময়। এই সমস্যা মোকাবেলায় অংশগ্রহণ করুন এবং সচেতনতার প্রসারে সাহায্য করুন।

আপনি কী মনে করেন? ঢাকার বায়ুদূষণ কমানোর জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন এবং আমাদের ব্লগে সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ