কক্সবাজারের সৈকত এক সময় ছিল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ স্থান, যেখানে সারা বছর লাখ লাখ পর্যটক আসতেন। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে ঘটে চলা অবাধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে এই সুন্দর সৈকত এখন হুমকির মুখে। রাতারাতি কক্সবাজারের বালিয়াড়ি দখল করে শতাধিক দোকান ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের খবর অনেককেই অবাক করেছে। এমন একটি ঘটনা যখন জানানো হয়, তখন আমাদের কাছে প্রশ্ন উঠে—কীভাবে এমন কিছু ঘটতে পারে যেখানে পরিবেশের জন্য এত বড় ঝুঁকি রয়েছে? কক্সবাজার সৈকতে অবৈধ স্থাপনা
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এই ঘটনায় পদক্ষেপ নিতে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে, যেখানে ১২ জন সরকারি কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নেয়া আইনি পদক্ষেপ পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে আমাদের আরও একটু মনোযোগী করে তুলতে পারে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
সৈকত দখল নিয়ে আইনি পদক্ষেপ
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এবং তার আশেপাশের এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে ২০১৩ সালে সরকারের একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল, যার অধীনে সৈকতের প্রথম ৩০০ মিটার ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, সম্প্রতি অবৈধভাবে এসব দোকান ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এমন ঘটনায় বেলা তাদের নোটিশে অভিযুক্ত ১২ জন সরকারি কর্মকর্তাকে দায়ী করেছে, যাদের মধ্যে তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, বিভিন্ন পরিবেশ সংস্থার কর্মকর্তাসহ আরও অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা রয়েছেন। এসব কর্মকর্তা যখন দায়িত্ব পালন করছেন, তখন কেন তারা এমন ঘটনার জন্য দায়ী হচ্ছেন? এর উত্তর আমাদের একসঙ্গে খুঁজে বের করতে হবে। কক্সবাজার সৈকতে অবৈধ স্থাপনা
পরিবেশ বিপর্যয়ে বড় আশঙ্কা
কক্সবাজার সৈকত দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের ঘটনা শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেও আরও তীব্র করে তুলছে। সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা এসব দোকান, হোটেল বা অন্যান্য স্থাপনা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব স্থাপনা তৈরির ফলে সমুদ্রের জলস্তর পরিবর্তন, বন্যপ্রাণীর বসবাসের স্থান সংকুচিত হওয়া এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কমে যাওয়া এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের ফলে সৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, যা প্রভাব ফেলছে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও পর্যটন শিল্পের ওপর। বিশেষত, সাগরের ওপর তৈরি হওয়া এই স্থাপনাগুলি ভবিষ্যতে সংকট তৈরি করতে পারে।
সরকারের পদক্ষেপ কী হবে?
বেলা কর্তৃক পাঠানো নোটিশের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি উঠেছে, দ্রুত এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলতে এবং সৈকতের পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে, এবং কক্সবাজারের পরিবেশ রক্ষায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
আমাদের সকলের উচিত সৈকতের সৌন্দর্য এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসা। যদি সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেয়, তবে কক্সবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।
কক্সবাজার সৈকত দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ঘটনা গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কক্সবাজার সৈকতসহ দেশের অন্যান্য প্রাকৃতিক স্থানে এই ধরনের ঘটনা আরও যাতে না ঘটে, সেজন্য সরকার ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সংহতি অপরিহার্য।
কল টু অ্যাকশন আপনি কী মনে করেন, কক্সবাজার সৈকতের পরিবেশ রক্ষার জন্য আরো কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত? মন্তব্য করুন এবং পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে আরো বেশি মানুষ সচেতন হয়।