দেশে বন বিভাগের দুর্নীতি নিয়েই মাঝে মাঝে খবর আসে। তবে সম্প্রতি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ঘটনায় যা ঘটেছে, তা আমাদের সকলকে আরও গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করে। বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাছ কাটা এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যা শুধু তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রকাশ নয়, আমাদের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিস্থিতির জন্যও একটি বড় সংকেত।
গাছ কাটা বন্ধ করার পর যখন বন কর্মকর্তা এবং তার সহকারী, আবার টাকা নিয়ে সেই গাছ কেটে নেওয়ার অনুমতি দেন, তখন কেবল আইনের প্রতি অবমাননা নয়, পরিবেশের উপর কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে—সে বিষয়েও আমাদের ভাবা উচিত।
গাছ কাটা: অপরাধ নাকি ব্যবসা?
যে গাছটি শুধু পরিবেশ নয়, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বৃষ্টির জল শোষণ এবং পৃথিবীকে শীতল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেই গাছ হয়ে যাচ্ছে একটি অল্পদামে বিক্রি হওয়া পণ্য। এমনকি যখন এসব অবৈধ কাজ করা হয়, তখন সে অঞ্চলের মানুষদেরও তা করতে বাধ্য করা হয়। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যতের।
প্রতিটি গাছ কাটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষত আমাদের দেশে যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে। গাছ কেটে ফেলার পর মাটির ক্ষয়, বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পায়। এটা শুধু একটি ছোট ঘটনার ফল নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও বিপদ ডেকে আনে।
বন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি: আমাদের কী করার আছে?
এই ধরনের ঘটনায় বন কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির খোঁজ পাওয়া গেলে, তা সমাজের জন্য এক ভয়াবহ সংকেত। কিন্তু আসল কথা হলো, তাদের মতো কেউ যদি এই ধরনের কাজ করতে পারে, তাহলে আমাদের উচিত তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া। এক্ষেত্রে, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উচিত তৎকালীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
অন্যদিকে, জনগণও যদি সচেতন হয়ে ওঠে এবং অবৈধভাবে গাছ কাটার কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, তাহলে এই ধরনের দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন: আমাদের বনাঞ্চল কেন রক্ষা করতে হবে?
গাছ কাটা এবং পরিবেশের ক্ষতি সৃষ্টির ফলে জলবায়ু পরিবর্তন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। পৃথিবীজুড়ে গাছের হার কমে যাওয়ার সাথে সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগও বাড়ছে। গাছ কাটা, বিশেষত যখন এটি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন এটি অনেক বড় ক্ষতি করে।
গাছ কাটা শুধুমাত্র আমাদের পরিবেশের ক্ষতি করে না, এটি আমাদের জীবনযাত্রা, কৃষি এবং জীববৈচিত্র্যকেও বিপন্ন করে তোলে। গাছের রক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব, কেননা এটি শুধু আমাদের ভবিষ্যতকেই নিরাপদ রাখে না, পৃথিবীর বাকি জীবকূলের জন্যও।
সমস্যা এবং সমাধান: আমাদের দায়িত্ব কি?
এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। বন বিভাগের কর্তৃপক্ষ যদি সতর্ক না থাকে, তাহলে পরিবেশের ক্ষতি বাড়তে থাকবে। তবে এর সমাধান আমাদের হাতেই। আমরা যদি সচেতন হই, তাহলে এই ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এবং পরিবেশকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারি।
এছাড়া, বনভূমির সুরক্ষা এবং টেকসই বন ব্যবস্থাপনা নীতিগুলি অনুসরণ করা হলে গাছ কাটার হার কমানো সম্ভব হবে। আমাদের উচিত, পরিবেশ এবং গাছপালা রক্ষা করা, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সুরক্ষিত পৃথিবী রেখে যেতে পারি।
এ ঘটনা আমাদের আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। বনভূমি রক্ষা করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসা জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথম পদক্ষেপ হবে—গাছের রক্ষা।