ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলায় গত এক দশকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটার ফলে একটি গুরুতর পরিবেশগত এবং কৃষি সংকট তৈরি হয়েছে। প্রভাবশালী মাটিখেকোরা খাল-বিল, নদী-নালা এবং পতিত জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি শুরু করলেও, বর্তমানে তারা পাট, পেঁয়াজ, এবং ধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসলি জমিতে হাত দিয়েছেন। ভেকু মেশিনের মাধ্যমে উর্বর মাটির উপরের স্তর (টপ সয়েল) কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এই কর্মকাণ্ড ফসল উৎপাদনের সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে এবং জমির উর্বরতা ধ্বংস করছে। অবৈধ মাটি কাটা
মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য এবং কৃষি জমির সংকট
মাটি কাটা প্রক্রিয়ায় তিন ফসলি জমির উর্বর মাটি অপসারণের ফলে জমির উর্বরতা হারিয়ে উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। জমি থেকে এক থেকে দেড় হাত মাটি তুলে ইটভাটায় বিক্রি করার কারণে সালথা ও নগরকান্দা অঞ্চলের মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে। পাশাপাশি, এই মাটিকাটা কার্যক্রমে শত শত ফিটনেসবিহীন অবৈধ ট্রলি ও ড্রাম ট্রাকের চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলো ধ্বংস হচ্ছে। মাটি বহনের সময় সড়কের উপর পড়ে থাকা মাটি বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ ও জমির মালিকদের ভূমিকা
এখানকার স্থানীয়রা মাটি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জমির মালিকদেরও দায়ী করছেন। জমির মালিকরা নগদ অর্থের লোভে তাদের জমির উর্বর মাটি বিক্রি করছেন। এই চক্রের সুযোগে মাটি ব্যবসায়ীরা জমির মালিকদের প্রলোভনে ফেলে কৃষিজমির মাটি তুলে নিচ্ছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে জমির উৎপাদনক্ষমতা ধ্বংস করছে।
প্রশাসনের সীমিত পদক্ষেপ এবং চক্রের চাতুরী
নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় প্রশাসন মাটি কাটা রোধে অভিযানে নামলেও এটি পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, দিনে অভিযান চালানোর পরও রাতে মাটি কাটা অব্যাহত থাকে। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানের পরও মাটিখেকোরা ফাঁকফোকর দিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও, তা তাদের কর্মকাণ্ডে কোনো স্থায়ী বাধা সৃষ্টি করতে পারছে না।
সচেতনতার অভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জমির মালিকদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, শুধুমাত্র প্রশাসনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়; জমির মালিকদেরও নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মাটিখেকোদের প্রলোভন এড়িয়ে জমির উর্বরতা রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়
এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, অবৈধ মাটিকাটা কার্যক্রম শুধুমাত্র জমির উর্বরতা ধ্বংস করছে না, এটি স্থানীয় পরিবেশ, অবকাঠামো এবং কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। প্রশাসনের তরফ থেকে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ ও জমির মালিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। ভবিষ্যতে জমি ও পরিবেশ রক্ষায় একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে কৃষিজমির এই অপ্রত্যাশিত ক্ষতি থামানো সম্ভব হয়।