সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কেওক্রাডং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুধুমাত্র একটি পরিবেশগত কার্যক্রম নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক মানবিক উদ্যোগের উদাহরণ। দুই দিনের এই অভিযানে প্রায় ১২০০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে, যেখানে স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের হাতে দ্বীপের প্রতিটি কোণা থেকে প্লাস্টিক বোতল, প্যাকেটসহ নানা ধরনের আবর্জনা সংগ্রহ করেছেন। তাদের এই শ্রম কেবলমাত্র দ্বীপের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য নয়, বরং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও পরিষ্কার পৃথিবী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি।
মানবিক প্রচেষ্টার গল্প
এই অভিযানে কেবল পরিবেশপ্রেমী ব্যক্তিরাই অংশ নেননি, অংশ নিয়েছে দ্বীপের শিক্ষার্থীরা, স্থানীয় মানুষ, কোস্ট গার্ড, এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ। সবার সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে এক ভ্রাতৃত্ববোধ—যেন সবাই মিলে নিজের বাসস্থানকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছে। একটি ছোট্ট উদ্যোগে এইভাবে এত মানুষের অংশগ্রহণ আসলে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি ব্যক্তি, প্রতিটি ছোট্ট প্রচেষ্টা কীভাবে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
স্থানীয়দের কণ্ঠ
দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে এই সংগঠনটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে পরিষ্কার রাখার জন্য কাজ করে আসছে। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হাবিব খানের বক্তব্যে তা স্পষ্ট—”যদি আমরা সবাই নিজেদের দায়িত্ব পালন করি, তাহলে শুধু সেন্ট মার্টিন নয়, সারা পৃথিবীই বর্জ্যমুক্ত করতে পারব।” এই কথা আসলে আমাদের চিন্তার খোরাক দেয়, যে একটি স্থানকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন শুধু একটু সচেতনতা এবং সহযোগিতা।
পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের মতে, “প্রতিবছর হাজারো পর্যটক এখানে আসেন, আর তাদের কারণে জমা হওয়া বর্জ্য দ্বীপের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে।” এ সমস্যার সমাধানে কেওক্রাডং বাংলাদেশের মতো সংগঠনগুলোর প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এই ধরনের কর্মসূচি প্রমাণ করে, কীভাবে ছোট ছোট উদ্যোগ একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
প্লাস্টিক দূষণ: একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ
কেওক্রাডং বাংলাদেশের সমন্বয়কারী মুনতাসির মামুন আরও এক বাস্তবতাকে সামনে এনেছেন—”প্লাস্টিক বর্জ্য যদি এখানে রয়ে যায়, এর প্রভাব শুধু দ্বীপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা বঙ্গোপসাগরের জল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।” এই বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা শুধু এক দ্বীপ নয়, সমগ্র পৃথিবীর দায়িত্ব নিচ্ছি। আমাদের প্রতিটি কাজের প্রভাব খুব দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
ছোট প্রচেষ্টা, বড় পরিবর্তন
এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান হয়তো একটি ছোট উদ্যোগ মনে হতে পারে, কিন্তু এর প্রভাব অনেক গভীর। এটি দেখায় যে, আমরা একসঙ্গে কাজ করলে পরিবেশের জন্য কী করতে পারি। আমরা যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন করি, তাহলে পৃথিবীকে বাঁচানো অসম্ভব নয়। সেন্ট মার্টিনের মতো প্রতিটি স্থানকে রক্ষার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা আমাদের পথ দেখায়।