বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান একজন পরিচিত মুখ। তিনি সম্প্রতি ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন, যেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ এবং দেশের সাধারণ মানুষকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। “বাংলাদেশে এনডিসির আলোকে কৃষি, বন ও অন্যান্য ভূমি থেকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক এই সেমিনারে তিনি বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেন এবং নতুন পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। জলবায়ু পরিবর্তন
তবে, সেমিনারে তাঁর যা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো তিনি শুধু সরকারেরই নয়, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার কথা বলেছেন। এটা যেন একটি সতর্কবার্তা—আমরা সবাই যদি একসঙ্গে না চলি, তাহলে বড় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।
বন ও ভূমি: জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমাদের দেশ আগামী দিনে আরও যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে, তার মূল চাবিকাঠি হল বন ও ভূমি সংরক্ষণ।” তিনি বাংলাদেশ সরকারের নতুন ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি)-এর কথা উল্লেখ করেন, যার মধ্যে বন, ভূমি এবং জলাভূমির সংরক্ষণকে গুরুত্বপূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে, বন উজাড় এবং ভূমির অবক্ষয় আজও দেশের একটি বড় সমস্যা, যা সঠিকভাবে সমাধান না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে খুব একটা ফল মিলবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, বনগুলো কার্বন শোষণ করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে কিছুটা কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু অবাধে বনভূমি উজাড় ও জমি বিক্রির ফলে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রিজওয়ানা হাসান বলছেন, “আমরা বনভূমি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখব।” সরকারের এই পদক্ষেপ যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে আমরা আরও সবুজ এবং সুরক্ষিত একটি বাংলাদেশ দেখতে পাবো।
কঠোর পদক্ষেপ: বনভূমির পুনরুদ্ধার
সেইসঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে সরকার বনভূমির দখল পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্প্রতি, প্রশাসন একাডেমির জন্য বরাদ্দকৃত ৭০০ একর বনভূমি এবং ১৫৬ একর বনভূমির দখল বাতিল করা হয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের বন সংরক্ষণের প্রতি সরকারের গভীর প্রতিশ্রুতি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বন উদ্ধার অভিযান থেমে থাকবে না”—এটি সরকারের পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি দৃঢ় মনোভাবকে প্রতিফলিত করে।
ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু আমাদের নিজেকে দিয়ে
রিজওয়ানা হাসান আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন—ব্যক্তিগত উদ্যোগের গুরুত্ব। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন রোধে শুধু সরকারের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর না করে, আমাদের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বও কম নয়।” এখানে ব্যক্তিগত পরিবর্তন নিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল অনেকটা এইরকম: জ্বালানিসাশ্রয়ী অভ্যাস ও পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন শুরু করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তন, শক্তি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার, কিংবা সৌর শক্তি ব্যবহার বাড়ানো।
যদি প্রতিটি নাগরিক জ্বালানি সাশ্রয়ী অভ্যাস গড়ে তোলে এবং দিনদিন বেশি করে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ করতে শুরু করে, তবে তা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জাতীয় অবদানের সঙ্গে মিলিত হয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি: আমরা কি প্রস্তুত?
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব এখন দৃশ্যমান, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। তবে, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মনে করেন, সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই পরিস্থিতি কিছুটা হলেও মোকাবিলা করা সম্ভব। তিনি বলেন, “আমরা যদি একসাথে কাজ করি, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তাহলে আমরা একটি সবুজ, উন্নত এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব”।
একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সরকারের, তেমনি আমাদের সকলেরই দায়িত্ব হল এই পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া এবং তার বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করা। সুতরাং, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, এবং রাষ্ট্র—এই তিন স্তরে একযোগভাবে কাজ না করলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই সফল হবে না।
সময় এখনই, একসাথে চলতে হবে
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যেমন বলেছেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি, আমাদের নিজেদের অভ্যাসে পরিবেশবান্ধব পরিবর্তন আনতে হবে। আসুন, আমরা প্রতিটি দিন একটি ছোট পদক্ষেপ নি, যেগুলো একসময় বড় পরিবর্তনে পরিণত হবে।
আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন, এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আপনার অভ্যাস পরিবর্তন করার যাত্রা শুরু করুন!