জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হলো অবৈধ ইটভাটার পরিবেশ দূষণ। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় সম্প্রতি পরিচালিত অভিযানে ছয়টি অবৈধ ইটভাটায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অবৈধ ইটভাটা কার্যক্রম বাংলাদেশের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বড় হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে।
অভিযানের বিস্তারিত
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ও ভৈরবপাশা ইউনিয়নে ছয়টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট শাখার নেতৃত্বে এসব ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।
কুলকাঠি ইউনিয়নের প্রতাপ ও সরই এলাকায় মেসার্স রিয়াজ ব্রিকসের দুটি ইটভাটার কিলন এবং কাঁচা ইট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ভৈরবপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এম বি এল ব্রিকস, এস আর বি ব্রিকস, এম এম আর ব্রিকস এবং রিয়াজ ব্রিকসের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ ১ থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চালানো হবে এবং অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবৈধ ইটভাটা ও পরিবেশ দূষণ
অবৈধ ইটভাটা পরিবেশ দূষণের অন্যতম বড় কারণ। এসব ইটভাটা সাধারণত কোনো নিয়ম-নীতি ছাড়াই গড়ে ওঠে। ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুদূষণের প্রধান উৎস। কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, এবং অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস বায়ুতে মিশে মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি করে।
এ ছাড়া, ইটভাটার জন্য মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে কৃষিজমি ধ্বংস করা হয়। অনেক সময় টপ সয়েল তুলে নেওয়ার ফলে জমির উর্বরতা কমে যায়। এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর প্রভাব
ইটভাটার দূষণ কেবল স্থানীয় পরিবেশ নয়, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনকেও প্রভাবিত করে। ইট তৈরির প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য দায়ী। অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন উজাড় এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অতিরিক্ত গাছপালা কেটে নেওয়ার ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এতে জলবায়ুর ভারসাম্য আরও বিঘ্নিত হয়।
সমাধানের পথ
অবৈধ ইটভাটার কারণে পরিবেশের ক্ষতি কমাতে টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রী যেমন ফ্লাই অ্যাশ ব্রিকস বা বায়ুপ্রবাহিত ইট প্রচলন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে তাদের বিকল্প জীবিকার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
এ ছাড়া, পরিবেশ আইন শক্তিশালী করা এবং তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে ইটভাটার কার্যক্রম আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব।
অবৈধ ইটভাটা দেশের পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এটি রোধে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
আপনার মতামত দিন! পরিবেশ রক্ষায় আপনি কী ধরনের উদ্যোগ নিতে চান? মন্তব্য করুন এবং এই পোস্টটি শেয়ার করে সচেতনতা ছড়িয়ে দিন।