সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কয়েকটি গ্রাম সুরমা নদীর শাখা ভটের খাল নদীর তীর ভাঙনের ফলে চরম বিপর্যয়ের মুখে। কয়েক বছর ধরে চলা এই ভাঙন স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি গ্রাস করছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদীর অব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তীরবর্তী পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। খাল নদীর ভাঙন
ভাঙনের তীব্রতা এবং মানুষের দুর্দশা
ভটের খাল নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি যে অনেক পরিবার ইতিমধ্যেই তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। নদীর পশ্চিম তীরের ব্রাহ্মণগাঁও, পূর্ব চাঁনপুর, এবং বেরাজপুর গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
তীরবর্তী জমি এবং রাস্তাগুলো ধসে পড়ার ফলে গ্রামের পরিবহন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ খুঁটি, রাস্তা, এবং গাছপালা নদীর গ্রাসে বিলীন হচ্ছে। কিছু বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে পেরেছেন, কিন্তু অনেকেই এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন। খাল নদীর ভাঙন
ভাঙনের কারণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
নদীর পশ্চিম তীরে ভাঙনের প্রধান কারণ বর্ষাকালে নদীর পানির স্রোত। নদীর পূর্বপাড়ে বাঁক থাকার কারণে স্রোত পশ্চিমপাড়ে সরাসরি আঘাত করে, যা ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া, শুকনা মৌসুমে মাটি দুর্বল হয়ে পড়ায় ভাঙন আরও বেড়ে যায়।
জলবায়ু পরিবর্তন এই পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করছে। অসময় বর্ষা, অপ্রত্যাশিত বন্যা, এবং দীর্ঘমেয়াদি শুষ্ক মৌসুম নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতিকে বিঘ্নিত করছে। ফলে ভাঙন এবং পরিবেশগত সংকট আরও প্রকট হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবস্থা এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের অভাব
ভাঙন রোধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা অপর্যাপ্ত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হলেও তা ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। নদীর ৮ কিলোমিটার এলাকা খনন এবং ৬ কিলোমিটার এলাকায় পাকা ব্লক স্থাপনের প্রস্তাবিত প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্দশা অব্যাহত থাকবে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি এবং কৃষিজমি চিরতরে হারিয়ে ফেলবে।
প্রভাবিত মানুষের কষ্টের চিত্র
নদীর তীরবর্তী মানুষের কষ্টের কোনো শেষ নেই। অনেকেই নিজেদের বসতভিটা, জমি, এবং জীবিকা হারিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। একসময় যাদের নিজের জমি ছিল, তারা এখন অন্যের করুণার ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যমান পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া এবং স্থানীয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেও বিঘ্নিত করছে।
নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে গভীর ফাটল সৃষ্টি হয়েছে, যা যেকোনো মুহূর্তে আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা ভাঙনের কবলে পড়ছে। এর ফলে শুধু ঘরবাড়িই নয়, পুরো এলাকাটির ভৌগোলিক মানচিত্র বদলে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
করণীয়: দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা
নদী ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিদ্যমান প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা এবং পাকা ব্লক স্থাপন করা জরুরি। নদী খননের মাধ্যমে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হলে ভাঙনের প্রকোপ কমানো সম্ভব।
তাছাড়া, স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে এবং তাদের জীবনযাত্রা স্থিতিশীল করতে বিশেষ কর্মসূচি চালু করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আরও সক্রিয় হওয়া জরুরি।
উপসংহার
সুরমা নদীর শাখা ভটের খাল নদীর ভাঙন একটি চলমান পরিবেশগত সংকট। এটি শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন নয়, বরং সামগ্রিক পরিবেশ এবং জলবায়ুর উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং মানুষের জীবন রক্ষার জন্য ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই এবং এই সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসি।
আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। নদী ভাঙন রোধে আপনার কী পরামর্শ? মন্তব্য করুন এবং পোস্টটি শেয়ার করুন।