সিলেট, বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার, ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ছে। এখানকার পাহাড়-টিলা কাটা অব্যাহত থাকার কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। পরিবেশবাদীদের মতে, টিলা ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য, জনস্বাস্থ্য, এবং স্থানীয় অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। এই সংকট কেবল স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়; এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রভাবকেও ত্বরান্বিত করছে। টিলা ধ্বংস বনাম উন্নয়ন
টিলা ধ্বংস: একটি তিক্ত বাস্তবতা
কিছু বছর আগেও সিলেটে ১,০২৫টি টিলা ছিল। আজ সেই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৫৬৫-তে। স্থানীয় প্রশাসন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে টিলা ধ্বংস অব্যাহত থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিলা কাটা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও তা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
টিলা ধ্বংসের আরেকটি কারণ হলো সরকারি ইজারা কার্যক্রম। এসব টিলাকে পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়, যা সরাসরি পরিবেশগত ক্ষতির জন্য দায়ী। স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর প্রভাব
পাহাড়-টিলা ধ্বংসের কারণে সিলেটের স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। মাটি উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ায় ভূমিধস এবং বন্যার আশঙ্কা বেড়েছে। এ ছাড়া টিলা ধ্বংসের ফলে মাটি এবং পানি উভয়ের গুণমান কমে যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ত্বরান্বিত প্রক্রিয়া এর আরেকটি প্রধান প্রভাব। টিলা কাটার ফলে মাটির স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে, যা স্থানীয় তাপমাত্রা বাড়িয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। টিলা ধ্বংস বনাম উন্নয়ন
চা-শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব
সিলেটের টিলা কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অংশ নয়, এটি চা-শিল্পের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিলা ধ্বংসের কারণে চা-বাগানের মাটি কম উর্বর হয়ে পড়ছে। ফলে চা উৎপাদন কমে যাচ্ছে, যা চা-শ্রমিকদের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। টিলা সংরক্ষণে উদাসীনতার ফলে এই শিল্পের টেকসই ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কেন থামছে না টিলা কাটা?
পাহাড়-টিলা কাটার অন্যতম কারণ হলো আইন প্রয়োগের দুর্বলতা। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য আইন থাকলেও তা কার্যকর করা হচ্ছে না। পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এই সংকটকে আরও তীব্র করেছে।
রাজনৈতিক প্রভাব এবং ব্যক্তিস্বার্থও এই সমস্যার জন্য অনেকাংশে দায়ী। টিলা ধ্বংসের অনুমোদন অনেক সময় রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য দেওয়া হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ এবং স্থানীয় অর্থনীতির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সংকট মোকাবিলায় করণীয়
সিলেটের পাহাড়-টিলা কাটা বন্ধ করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আইন প্রয়োগে কঠোরতা আনতে হবে এবং টিলা সংরক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
তাছাড়া, চা-শিল্প এবং অন্যান্য স্থানীয় অর্থনৈতিক খাতগুলো রক্ষার জন্য পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। টিলা ধ্বংস বন্ধ করার পাশাপাশি পুনর্বাসন প্রকল্পও চালু করতে হবে, যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
উপসংহার
সিলেটের পাহাড়-টিলা কাটা একটি গুরুতর পরিবেশগত সংকট, যা অবিলম্বে সমাধানের দাবি রাখে। টিলা সংরক্ষণ কেবল প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য নয়, স্থানীয় অর্থনীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ রক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব। আসুন, আমরা সকলে মিলে টিলা রক্ষার এই উদ্যোগকে সমর্থন করি। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। সচেতনতার এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে পোস্টটি শেয়ার করুন।