ইংরেজি বছরের শেষ রাত। এই সময় সবাই সাধারণত শহরের কোলাহলে, আতশবাজি আর উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করে থাকেন। কিন্তু আটটি দেশের ৩৮ জন বিদেশি ইকোট্যুরিস্ট সুন্দরবনের নির্জন ম্যানগ্রোভ বনে এসে উদযাপন করলেন এক ভিন্নধর্মী থার্টি ফার্স্ট নাইট। তাদের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধবই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্ব সম্পর্কেও একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন
ইকোট্যুরিস্ট: তারা কারা?
ইকোট্যুরিস্ট হলেন সেই পর্যটক যারা প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণে আগ্রহী। তাঁরা ভ্রমণের সময় পরিবেশের ক্ষতি না করে, বরং প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেন। শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ এড়িয়ে তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা উপভোগ করেন। এভাবে, ইকোট্যুরিস্টরা প্রকৃতি ও পর্যটনের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করেন।
বিদেশি ইকোট্যুরিস্টদের সুন্দরবনে উপস্থিতি
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান থেকে আগত এই ইকোট্যুরিস্টরা সুন্দরবনের করমজল, কটকা-কচিখালী, হিরনপয়েন্ট, দুবলা, নীলকমল এবং মান্দারবাড়িয়ার মতো জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। আধুনিক ট্যুরিস্ট লঞ্চে চড়ে তারা সুন্দরবনের নির্জনতা, সবুজ প্রকৃতি, এবং এর অসাধারণ জীববৈচিত্র্য উপভোগ করেন। থার্টি ফার্স্ট নাইটের সময় তাঁরা একদম শান্ত পরিবেশে রাত কাটিয়েছেন। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন
পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বার্তা
এই ইকোট্যুরিস্টদের উদ্যোগ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের উৎসব ছিল শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণমুক্ত, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন বিভাগের সহযোগিতায় তাঁরা এমনভাবে রাতটি উদযাপন করেছেন, যা বনভূমি ও বন্যপ্রাণীর প্রতি তাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়। সুন্দরবনের মতো জায়গায় এ ধরনের উদযাপন প্রকৃতির গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালোভাবে তুলে ধরে।
দেশি পর্যটকদের অংশগ্রহণ
বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি প্রায় আড়াইশ দেশি পর্যটকও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে সুন্দরবনে উপস্থিত হয়েছিলেন। দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের মিলনমেলা সুন্দরবনের পরিবেশে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। তাঁদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রকৃতির সুরক্ষা এবং পর্যটনের টেকসই উন্নয়নের একটি সুন্দর উদাহরণ।
সুন্দরবনের গুরুত্ব
সুন্দরবন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এটি শুধু অক্সিজেনের ভাণ্ডার নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে একটি প্রাকৃতিক প্রতিরোধক। ইকোট্যুরিস্টদের উপস্থিতি সুন্দরবনের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরেছে এবং এটির সংরক্ষণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করেছে।
শেষ কথা
ইকোট্যুরিস্টদের থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন শুধু আনন্দের নয়, বরং এটি পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সচেতনতার একটি বার্তা। আপনি যদি প্রকৃতি ভালোবাসেন এবং পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন, তবে একবার সুন্দরবনে ঘুরে আসুন। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে, এবং প্রকৃতির প্রতি আপনার ভালোবাসা আরও গভীর হবে।