বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সরকারী উদ্যোগ জোরদার করার লক্ষ্যে পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদন বন্ধে নতুন অভিযান শুরু করা হচ্ছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, অবৈধ পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদন বন্ধে অভিযান আরও তীব্র করা হবে। এজন্য মোবাইল কোর্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং অবৈধ পলিথিন পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পলিথিন জব্দ
পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদনে তীব্র অভিযান
আজ শনিবার রাজধানীর হাতিরপুল ও পলাশী কাঁচাবাজারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, যেখানে পলিথিন শপিংব্যাগের ব্যবহার রোধ করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছেন, গত ৩ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী ২১৬টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে ৪৩৮টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৮ লাখ ৭৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং আনুমানিক ৫৯ হাজার ৯৫৯ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। পলিথিন জব্দ
পরিবেশদূষণের ভয়ংকর প্রভাব
পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশে ভয়ংকর দূষণ সৃষ্টি করছে। এটি নদী-খালের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে এবং মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে। পলিথিন দূষণ শুধুমাত্র পরিবেশের জন্যই নয়, বরং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক। পলিথিন পোড়ানোর ফলে ডাইঅক্সিন ও ফুরানের মতো অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয়, যা বায়ুদূষণের মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
জনসচেতনতা ও বিকল্প ব্যাগের প্রয়োজনীয়তা
পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড় ও মোমপালিশ করা কাগজের ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, বাজারে গেলে নিজের ব্যাগ নিয়ে যেতে হবে এবং বিকল্প ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যাতে জনগণ প্লাস্টিকের বদলে পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যাগ গ্রহণে উৎসাহিত হয়।
উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতা
পরিবেশসম্মত ব্যাগ উৎপাদনে আগ্রহী বেশ কিছু উদ্যোক্তা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। ভুট্টার স্টার্চ দিয়ে তৈরি ব্যাগ উৎপাদনের অনুমতি পেতে উদ্যোক্তারা তিন বছর ধরে চেষ্টা করে আসছেন, কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এখনো ছাড়পত্র পাননি। এর ফলে, উৎপাদন শুরু করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং বাজারে বিকল্প ব্যাগের অভাব দেখা দিয়েছে।
সরকারি উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ
পরিবেশ অধিদপ্তর ও মনিটরিং টিম গত বছর থেকে পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। বর্তমানে ১৯৯টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, যেখানে ৪১৪টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া, আনুমানিক ৫০ হাজার ৫৫৬ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করা হয়েছে এবং চারটি পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানার সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
উপসংহার: সচেতনতা ও সহযোগিতার প্রয়োজন
পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদন বন্ধে সরকারের তীব্র প্রচেষ্টার পাশাপাশি, জনগণের সচেতনতা ও সহযোগিতা অপরিহার্য। বিকল্প ব্যাগ ব্যবহারে অভ্যস্ততা গড়ে তোলা এবং পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোই একমাত্র উপায় বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণের ভীষণ চ্যালেঞ্জ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। সচেতনতা বৃদ্ধি, রিসাইক্লিংয়ের উন্নতি এবং প্রশাসনিক সহায়তা সরকারের সফল অভিযানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।