বাংলাদেশে প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণ পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর পলিথিন বন্ধে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হলেও, কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। সুপারশপে পলিথিন বন্ধের পদক্ষেপ সফল হলেও, খোলাবাজারে এর ব্যবহার এখনো অব্যাহত রয়েছে। পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ
পলিথিনের বিকল্প ব্যাগে নজর নেই
পলিথিন বন্ধের প্রচেষ্টার পাশাপাশি, পরিবেশসম্মত ব্যাগ উৎপাদনে আগ্রহী বেশ কিছু উদ্যোক্তা এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু, ভুট্টার স্টার্চ দিয়ে তৈরি ব্যাগ উৎপাদনের অনুমতিই পাচ্ছেন না তাঁরা। পরিবেশ অধিদপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে এই উদ্যোক্তাদের, যারা বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন। তিন বছর ধরে চেষ্টা করেও ভুট্টার স্টার্চে তৈরি ব্যাগের অনুমতি পাননি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান, যার ফলে তারা উৎপাদন শুরু করতে পারছেন না।
উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতা
রাজশাহীর ক্রিস্টাল বায়োটেক ও গোপালগঞ্জের জে কে পলিমার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পেয়ে উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। উদ্যোক্তারা জানান, তাদের ব্যাগগুলো পরিবেশসম্মত ও পচনশীল, কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে অনুমতি পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের আর্থ ম্যাটারস লিমিটেড ভুট্টার স্টার্চের তৈরি ব্যাগ উৎপাদনে সফল হলেও, বাংলাদেশের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রির অনুমতি পাইনি। পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ
সরকারি উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা ঘোষণামতে, নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদনকারী কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। গত বছর থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও মনিটরিং টিম ৪১৪টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করেছে এবং আনুমানিক ৫০ হাজার ৫৫৬ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে। তবে, পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করছে প্রশাসনিক জটিলতা ও উপাদানের অভাব।
পলিথিনের বিকল্পের প্রয়োজনীয়তা
পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলন অনুসারে, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটপণ্যের ও তন্তুজাতীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক উৎপাদনে প্রণোদনা ও উৎসাহ প্রদানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। পাট এবং চট দিয়ে তৈরি ব্যাগগুলো পরিবেশের জন্য নিরাপদ ও টেকসই বিকল্প হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে, তবে এর জন্য সরকারি সমর্থন ও সহজলভ্যতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
উপসংহার: সচেতনতা ও সহযোগিতার প্রয়োজন
পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহারে বাধা কাটিয়ে উঠতে সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ এবং প্রশাসনিক সহায়তা অপরিহার্য। পাশাপাশি, সাধারণ জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিকল্প পণ্যের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করাও গুরুত্বপূর্ণ। প্লাস্টিক দূষণ কমাতে এবং পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, রিসাইক্লিংয়ের উন্নতি এবং পরিবেশ বান্ধব বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোই একমাত্র উপায় বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণের ভীষণ চ্যালেঞ্জ থেকে রক্ষা করতে পারে।
#পলিথিনের_বিকল্প #পরিবেশ_রক্ষা #পলিথিন_দূষণ #বায়োডিগ্রেডেবল_প্লাস্টিক #সচেতনতা #বাংলাদেশ #পরিবেশসংরক্ষণ