26.9 C
Bangladesh
শনিবার, জুন ২১, ২০২৫
spot_img

খুলনার বেড়িবাঁধ: প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধ

খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট — পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় জেলা তিনটি এলাকায় মোট ২,০২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১,৯৮২ কিলোমিটার মাটি দিয়ে তৈরি বাঁধ, যা ষাটের দশকে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র ৬০ কিলোমিটার মাটির বেড়িবাঁধই স্থিত রয়েছে, ফলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অস্বাভাবিক জোয়ারের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এ বাঁধগুলো অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হচ্ছে। খুলনার বেড়িবাঁধ

মাটি দিয়ে তৈরি বেড়িবাঁধের দুর্বলতা

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অনুযায়ী, কংক্রিটের ব্লক দিয়ে তৈরি বাঁধ মাত্র ৪৫ কিলোমিটার। মাটি দিয়ে তৈরি বাঁধগুলো দুর্বল এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ভেঙে প্লাবিত হয়, গ্রামের পর গ্রাম বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া মাটির বাঁধের অর্ধেকও এখন অবশিষ্ট নেই। ফলে নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারে পানি উপচে ঢোকে, যা জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি ঘটায়। খুলনার বেড়িবাঁধ

মাটি বনাম ব্লক: খরচ এবং কার্যকারিতা

পাউবো সূত্রে জানা যায়, ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরির খরচ মাটি দিয়ে তৈরির তুলনায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা বেশি প্রতি কিলোমিটারে। মাটি দিয়ে বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণের খরচ চার-পাঁচ কোটি টাকা মাত্র। এই উচ্চ খরচের কারণে ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরির প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সংস্থান সীমিত থাকার কারণে বেশিরভাগ বাঁধ মাটি দিয়েই সংস্কার করা হচ্ছে, যা কার্যকারিতার দিক থেকে যথেষ্ট নয়।

স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তা

পাউবো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জানান, পুরো বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন। তবে, অর্থায়নের অভাবে তা এখনো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ব্লক দিয়ে ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণকাজ চলছে এবং জরাজীর্ণ ৬০ কিলোমিটার মাটির বাঁধ মাটি দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে। কিছু স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধকে সাময়িকভাবে মেরামত করা হচ্ছে, কিন্তু তা টেকসই সমাধান নয়।

স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা

কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, অনেক জায়গায় বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা কমে গেছে, কিছু বাঁধ ভেঙে একেবারে সরু হয়ে গেছে। এছাড়া, বাঁধের ছিদ্র করে নদী থেকে চিংড়ি ঘেরে লবণপানি তোলা হয়, যা বাঁধকে আরও দুর্বল করে তুলছে। স্থানীয়দের মতে, বেড়িবাঁধের সংস্কার না করা হলে ভবিষ্যতে আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। খুলনার বেড়িবাঁধ

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ

পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে। নিজস্ব অর্থায়নে ৩১ নম্বর পোল্ডারে বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হবে এবং কিছু স্থানে ব্লক দেওয়া হবে। তবে, এখনও পর্যাপ্ত অর্থ সংস্থান পাওয়া যায়নি, যা প্রকল্পের সম্পূর্ণতায় বাধা সৃষ্টি করছে।

উপসংহার: ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি

খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের বেড়িবাঁধগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় অপর্যাপ্ত হয়ে পড়েছে। মাটি দিয়ে তৈরি বাঁধের দুর্বলতা স্থানীয় জনগণের জীবন ও সম্পত্তির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য, তবে অর্থায়নের অভাব তা রূপায়ণকে চ্যালেঞ্জ করছে। স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জাতীয় সরকারকে একসাথে উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আরও দুর্যোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

শেয়ার করুন এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন।

#বেড়িবাঁধ #জলবায়ু_পরিবর্তন #খুলনা #সাতক্ষীরা #বাগেরহাট #পরিবেশ_রক্ষা #পানি_উন্নয়ন_বোর্ড

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ