পলিথিন নিষিদ্ধের ইতিহাস
বাংলাদেশে ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, এবং বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরিবেশ রক্ষায় এই উদ্যোগটি ছিল অত্যন্ত যুগান্তকারী, কারণ বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি দেশ পলিথিন নিষিদ্ধ করেছিল। শুরুর দিকে, এই পদক্ষেপটি ফলপ্রসূ হয়েছিল। পলিথিনের ব্যবহার প্রায় শূন্যে নেমে আসে, এবং পরিবেশে এর ক্ষতিকর প্রভাব কমতে শুরু করে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নজরদারি কমে যাওয়ায় আবারও পলিথিনের ব্যবহার বাড়তে থাকে। পলিথিন বর্জ্য
বর্তমান পরিস্থিতি: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পলিথিনের ব্যবহার
নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, বাজারে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি। বরং বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ঢাকায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি পলিথিন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। কম দামে সহজলভ্য এবং ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় পলিথিন এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালালেও তা যথেষ্ট নয়। কারণ সচেতনতার অভাব এবং বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ জনগণ পলিথিন ব্যবহারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পলিথিন বর্জ্য
পরিবেশগত প্রভাব
পলিথিন বর্জ্য পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। মাটিতে জমে থাকা পলিথিন মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, যা কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা কমায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে বন্যা এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, যা শহরাঞ্চলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। পলিথিনের বর্জ্য নদী-নালা দূষিত করে, যা জলজ প্রাণী এবং সামগ্রিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, পলিথিন পুড়িয়ে ফেলার সময় ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়, যা বাতাসের গুণমান নষ্ট করে এবং মানুষের শ্বাসযন্ত্রের রোগ বাড়ায়।
কিছু চমকপ্রদ তথ্য
- পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহারের পর মাটিতে পচতে ৪০০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। ফলে এটি দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- বিশ্বজুড়ে প্রতি মিনিটে প্রায় ১০ লক্ষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়, যা পরবর্তী সময়ে পরিবেশ দূষণে ভূমিকা রাখে।
- প্রতি বছর প্রায় ১০০,০০০ সামুদ্রিক প্রাণী পলিথিন বর্জ্যের কারণে মারা যায়। পলিথিন বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
- পলিথিন বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার সময় কার্বন ডাই অক্সাইডসহ অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। যা বায়ু দূষণ করে এবং মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আইনি বাধা ও চ্যালেঞ্জ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালালেও, পলিথিন উৎপাদন এবং ব্যবহারের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব হয়নি। মূলত বাজারে পলিথিনের সহজলভ্যতা এবং কম খরচের কারণে এটি বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক সময় কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে পলিথিন উৎপাদন বন্ধে বাধা দেয়। ফলে আইন প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে এবং পলিথিনের ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে।
বিকল্প ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা
পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন করা হলেও, তাতে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায়নি। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। বাজারে সহজলভ্য এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেতারা পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যবহার করছেন। বিক্রেতারাও বিকল্প ব্যবস্থার ঘাটতির কথা উল্লেখ করেন। এজন্য সরকারের উচিত বাজারে সুলভ মূল্যে বিকল্প পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা।
উপসংহার: আমাদের করণীয়
পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর আইন প্রয়োগ, এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রতিটি নাগরিকের উচিত পলিথিন ব্যবহারের অভ্যাস ত্যাগ করে পরিবেশ বান্ধব পণ্য ব্যবহার করা।
আপনার মতামত দিন এবং জানুন কীভাবে আমরা সবাই মিলে একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজ বাংলাদেশ গড়তে পারি। বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের পূর্ণাঙ্গ পোস্টটি। #জলবায়ুপরিবর্তন #পরিবেশদূষণ #পলিথিনব্যবহার #সচেতনতা #GreenBangladesh