নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের ময়না দ্বীপ এখন পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। শীতকালে সাইবেরিয়া, তুন্দ্রা এবং হিমালয়সহ বিভিন্ন শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে আসা পরিযায়ী পাখিরা এখানে আশ্রয় নেয়। ক্যাম্পাসের ছোট-বড় জলাভূমি ঘিরে পাখিদের এই মিলনমেলা প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে এই পাখির রাজ্য, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। নোবিপ্রবি ক্যাম্পাস
পাখিদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা
নোবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্যাম্পাসে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা নিয়মিত পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রচারণা চালায় এবং নজরদারি করে। ময়না দ্বীপের হ্রদের পাড়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, যাতে পাখিদের বিরক্ত না করা হয়। এখানে শব্দদূষণ, পিকনিক, ঢিল ছোড়া বা পাখিদের ভয় দেখানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ময়না দ্বীপ: পাখিদের নতুন অভয়ারণ্য
ময়না দ্বীপের হ্রদে দেখা মেলে ধূসর টিটি, জল পিপি, পাতি সরালি, বড় বগা, ছোট পানকৌড়ি এবং চখাচখির মতো নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখির। শান্ত পরিবেশে পাখিরা নির্ভয়ে উড়ে বেড়ায়, যা পাখি প্রেমীদের জন্য এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। ক্যাম্পাসে পাখিদের এই নিরাপদ আশ্রয় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেও পরিচিতি পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত এই জায়গায় গিয়ে পাখিদের কিচিরমিচির শুনে মুগ্ধ হন। নোবিপ্রবি ক্যাম্পাস
শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা পাখির রাজ্য
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ময়না দ্বীপের পাখির রাজ্য গড়ে ওঠার পেছনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা পাখি সংরক্ষণ এবং পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা ক্যাম্পাসজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতার বার্তা নিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। এগুলোতে লেখা রয়েছে, “জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সময়ের দাবি,” “পাখিরা ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকব”।
শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানাভাবে ভূমিকা রাখছেন। তারা নিয়মিত পাখি দেখার জন্য আসা দর্শনার্থীদের পরামর্শ দেন, যেন তারা কোনোভাবেই পাখিদের বিরক্ত না করেন। এছাড়া, শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্যাম্পাসের আশপাশ পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নেন, যাতে পাখিরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ শুধু পাখিদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করাই নয়, বরং এটি অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের এ প্রচেষ্টার ফলে ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি এখন একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: পাখিদের জন্য আরও নিরাপদ পরিবেশ
নোবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে পাখিদের জন্য আরও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ক্যাম্পাসের তিনটি এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ময়না দ্বীপ, গেস্টহাউস–সংলগ্ন এলাকা এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংলগ্ন জলাভূমি অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব এলাকায় যেকোনো ধরনের চাষাবাদ, শিকার, এবং পাখিদের বিরক্ত করার মতো কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। তারা নিয়মিতভাবে এসব এলাকায় নজরদারি চালায়, যাতে পাখিরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারে।
ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসে আরও বেশি সবুজায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা পাখিদের জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ তৈরি করবে। কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনায় রয়েছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় নতুন গাছ লাগানো এবং জলাভূমিগুলোকে আরও উন্নত করা।
পাশাপাশি, পাখিদের আবাসস্থল সুরক্ষায় স্থানীয় সম্প্রদায়কে আরও বেশি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালা এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে পাখিদের জন্য একটি স্থায়ী নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
পরিবেশ সচেতনতার দৃষ্টান্ত
ময়না দ্বীপে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় প্রদান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সচেতনতার একটি দৃষ্টান্ত। এই উদ্যোগ জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে আরও বেশি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে। আশা করা যায়, এই ক্যাম্পাসে প্রতি বছর আরও বেশি পরিযায়ী পাখি আশ্রয় নেবে।
Call-to-Action (CTA): আপনার পরিবেশ রক্ষার প্রচেষ্টায় অংশ নিতে এবং আরও তথ্য পেতে আমাদের প্রতিবেদনটি পড়ুন। শেয়ার করুন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ান!