হবিগঞ্জের মাধবপুর ও ওলিপুর এলাকার অবৈধ শিল্পকারখানার বর্জ্য বলভদ্র নদীর মাধ্যমে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশছে। এই দূষণ নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। হবিগঞ্জে এক পথসভায় পরিবেশবাদীরা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অবৈধ শিল্পকারখানার বর্জ্য
হবিগঞ্জের শিল্পবর্জ্য দূষণের উৎস
ওলিপুর ও মাধবপুর এলাকায় অপরিকল্পিত শিল্পকারখানাগুলো আশপাশের খাল-বিল ও নদীগুলো দূষিত করছে। বিশেষত সুতাং নদী ও বলভদ্র নদী মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে, যার ফলে দূষিত বর্জ্য মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশছে। পথসভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, কারখানাগুলো কোনো প্রকার বর্জ্য পরিশোধন না করে সরাসরি জলাশয়ে বর্জ্য ফেলছে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
পরিবেশবাদীদের পর্যবেক্ষণ
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপারের উদ্যোগে এই পথসভার আয়োজন করা হয়। পরিবেশবাদীরা বলেন, এই দূষণ শুধু নদী নয়, আশপাশের জমি, কৃষিকাজ এবং মানুষের জীবিকা ও স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দূষিত পানির কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, এবং খাল-বিলের পানি ব্যবহারে ত্বকের সমস্যা হচ্ছে। অবৈধ শিল্পকারখানার বর্জ্য
আইন লঙ্ঘন ও শিল্পদূষণ
ধরা ও ওয়াটারকিপার বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, শিল্পকারখানাগুলো বর্জ্য পরিশোধন না করে সরাসরি নদী ও খালে ফেলার মাধ্যমে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করছে। এ বিষয়ে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
ভবিষ্যতে করণীয়: দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ
পরিবেশবাদীরা মনে করেন, হবিগঞ্জের শিল্পবর্জ্য দূষণ রোধে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপন
প্রত্যেক শিল্পকারখানায় বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপন বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোনো কারখানা যেন বর্জ্য পরিশোধন ছাড়া সরাসরি নদী বা খালে বর্জ্য ফেলার সুযোগ না পায়, তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটরিং প্রয়োজন। এ বিষয়ে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে।
২. নিয়মিত পরিদর্শন ও জরিমানা
পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়মিতভাবে কারখানাগুলো পরিদর্শন করতে হবে। যেসব কারখানা পরিবেশ আইন অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এভাবে দূষণকারীদের মধ্যে জবাবদিহিতা তৈরি করা সম্ভব।
৩. স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি
স্থানীয় জনগণের মধ্যে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রচারণা চালানো যেতে পারে। জনগণকে বুঝতে হবে যে দূষণ রোধে তাদেরও ভূমিকা আছে।
৪. বিকল্প শিল্পায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন
শিল্পায়ন প্রয়োজন, কিন্তু তা অবশ্যই টেকসই হতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিকল্প শিল্পায়ন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। কারখানাগুলোকে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে হবে, যা বর্জ্য উৎপাদন কমায় এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে।
৫. জনমত তৈরি এবং আইনি সহায়তা
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এবং সাধারণ মানুষকে নিয়ে একটি শক্তিশালী জনমত তৈরি করতে হবে, যাতে দূষণকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। প্রয়োজন হলে, দূষণ রোধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আইনের সহায়তায় দূষণকারীদের বাধ্য করতে হবে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হতে।
৬. সমন্বিত উদ্যোগ
স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্প মালিকরা এবং জনগণকে সমন্বিতভাবে দূষণ রোধে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে একটি কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করলে দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব।
৭. গবেষণা ও উন্নয়ন
দূষণের কারণ এবং এর প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে গবেষণা চালাতে হবে। নতুন প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। পরিবেশ সংরক্ষণে দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
পরিবেশ রক্ষা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং আমাদের সবার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
Call-to-Action: পরিবেশ রক্ষায় আপনিও অংশ নিতে চান? মন্তব্যে জানান আপনার মতামত।