27.2 C
Bangladesh
শনিবার, জুন ২১, ২০২৫
spot_img

পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে হাইকোর্টের পদক্ষেপ: ইটভাটা বন্ধে কড়া নির্দেশ

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা—বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি—এ অবৈধ ইটভাটাগুলো যেন তাদের কার্যক্রম শুরু করতে না পারে, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের এক সপ্তাহের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই নির্দেশনাটি আসে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) এক সম্পূরক আবেদনের শুনানির পর। ইটভাটা বন্ধে কড়া নির্দেশ

অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ

হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রবিবার এই আদেশ দেন। পাশাপাশি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তিন জেলার জেলা প্রশাসকদের আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা কার্যকর হয়নি বলে এইচআরপিবি পক্ষে আবেদন করা হয়।

পরিবেশের উপর ইটভাটার প্রভাব

অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ, কয়লা ও কাঠ পোড়ানোসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এসব ইটভাটা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বায়ুদূষণ, মাটির ক্ষয়, এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এসব ইটভাটার কারণে নিয়মিত ঘটে চলেছে। এ ধরনের ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তা ভবিষ্যতে পরিবেশের জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। ইটভাটা বন্ধে কড়া নির্দেশ

আদালতের নির্দেশনার পটভূমি

২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করে পার্বত্য অঞ্চলের অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি না হওয়ায় এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হওয়ায় এইচআরপিবি নতুন করে আবেদন জানায়। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি জানান, অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তা বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

ভবিষ্যতে করণীয়

অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষার জন্য আরও কিছু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এই উদ্যোগকে টেকসই করতে এবং পরিবেশের উপর এর ইতিবাচক প্রভাব নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত করণীয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে:

১. নিয়মিত মনিটরিং এবং পরিদর্শন:

অবৈধ ইটভাটাগুলো যেন পুনরায় কার্যক্রম শুরু করতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত মনিটরিং এবং পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা যেতে পারে, যারা প্রতিমাসে এই ভাটাগুলো পরিদর্শন করবে।

২. জনসচেতনতা বৃদ্ধি:

ইটভাটার কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা সম্পর্কে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে। গ্রাম ও শহর এলাকায় সচেতনতা কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে, যেখানে ইটভাটার দূষণ এবং পরিবেশের ক্ষতির বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। স্থানীয় বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে এই বিষয়ে বিশেষ আলোচনা এবং কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে।

৩. বিকল্প প্রযুক্তির ব্যবহার:

পরিবেশবান্ধব ইটভাটার প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, হাইব্রিড হফম্যান কিলন (এইচএইচকে) বা ভার্টিক্যাল শ্যাফট ব্রিক কিলন (ভিএসবি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইট উৎপাদন করা যায়, যা তুলনামূলকভাবে কম দূষণ ঘটায়। এসব প্রযুক্তি গ্রহণে উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে।

৪. আইনের কঠোর প্রয়োগ:

অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ইটভাটা পরিচালনার জন্য নির্ধারিত নিয়ম-কানুন যারা মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা বা অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

৫. বনায়ন কর্মসূচি:

ইটভাটার জন্য কেটে ফেলা বনভূমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে বনায়ন কর্মসূচি চালু করতে হবে। এতে করে পরিবেশের ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ করা সম্ভব হবে। স্থানীয় জনগণকে এই বনায়ন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা গেলে তারা আরও বেশি উৎসাহী হয়ে উঠবে।

৬. উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা:

অবৈধ ইটভাটার মালিকদের পুনর্বাসনের জন্য একটি সহযোগিতা কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে। তাদেরকে পরিবেশবান্ধব ব্যবসায় যুক্ত করতে প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যাতে তারা অবৈধ কার্যক্রম ছেড়ে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে যুক্ত হতে পারেন।

এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশের পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে চলেছে। এই সমস্যা সমাধানে হাইকোর্টের নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সাধারণ জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

Call-to-Action: পরিবেশ সুরক্ষায় আপনার মতামত কী? অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আরও কী কী করা যেতে পারে? মন্তব্য করুন এবং শেয়ার করুন আপনার চিন্তাধারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ