সিলেট নগরের কালাশীল টিলাগড় এলাকায় একটি অসুস্থ বানর চিকিৎসার অভাবে করুণভাবে মারা গেছে। তিন দিন ধরে ছাদের উপর অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকা বানরটির জন্য স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক দুঃখ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বন বিভাগের চিকিৎসা সেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে বন্য প্রাণীর জন্য জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান বাধ্যতামূলক। অসুস্থ বানরের মৃত্যু
বন বিভাগের চিকিৎসক না থাকায় অসহায় বানর
গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসুস্থ বানরটির ছবি ও তথ্য ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দা জান্নাতুল মৌ তৎপর হন। প্রাণীদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা থেকে তিনি নিজেই উদ্যোগ নেন বানরটির দেখাশোনার। জান্নাতুল মৌ জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর বোন বানরটিকে দেখার পরই বন বিভাগের সহায়তা চান। কিন্তু তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া না পেয়ে পরদিন প্রাণী চিকিৎসকদের নিয়ে বানরের কাছে যান। অসুস্থ বানরের মৃত্যু
বন বিভাগের দায়িত্বে ঘাটতি
বন বিভাগের নিজস্ব কোনো প্রাণী চিকিৎসক না থাকায় উদ্ধার হওয়া বন্য প্রাণীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তারা অসহায় হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে সিলেট বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ জানান, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় বন্য প্রাণীদের চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু বানরটির ক্ষেত্রে সেই সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি, যা তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বন বিভাগের করণীয়
বন বিভাগের চিকিৎসক না থাকা এবং তাৎক্ষণিক সহায়তার অভাবে বন্য প্রাণীদের সুরক্ষায় যে ঘাটতি রয়ে গেছে, তা এখনই পূরণ করা জরুরি। প্রাণীদের জীবন রক্ষার্থে বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় একজন স্থায়ী প্রাণী চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অসুস্থ বানরের মৃত্যু
সমাধান ও ভবিষ্যৎ করণীয়
সিলেট বন বিভাগে প্রাণী চিকিৎসকের অভাব শুধু একটি বানরের মৃত্যুতেই থেমে নেই, বরং এটি বৃহত্তর একটি সমস্যার ইঙ্গিত দেয় যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যার সমাধান এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:
১. স্থায়ী প্রাণী চিকিৎসকের নিয়োগ:
বন বিভাগের প্রতিটি শাখায় একজন করে স্থায়ী প্রাণী চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। বন্যপ্রাণী উদ্ধার এবং জরুরি চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের স্থায়ী ব্যবস্থা বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এবং এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
২. জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্য মোবাইল ইউনিট:
বন বিভাগের অধীনে মোবাইল চিকিৎসা ইউনিট চালু করা যেতে পারে, যা দূরবর্তী অঞ্চলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে। এতে করে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়া যাবে।
৩. স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয়:
স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রাণী চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি স্থায়ী সহযোগিতা প্রক্রিয়া তৈরি করা যেতে পারে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সুরক্ষার ব্যবস্থা আরও উন্নত করা সম্ভব।
৪. সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি:
স্থানীয় জনগণ এবং বন বিভাগের কর্মীদের জন্য নিয়মিত সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে। এতে করে তাঁরা বন্যপ্রাণীদের প্রতি আরও সংবেদনশীল হবেন এবং জরুরি অবস্থায় দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
৫. জনগণের সহযোগিতা:
স্থানীয় বাসিন্দাদের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। তাঁরা বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে যেকোনো বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত সমস্যায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করতে পারেন। বন বিভাগের উচিত তাঁদের সহযোগিতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত কর্মশালা ও প্রচারণা চালানো।
৬. বন বিভাগের অবকাঠামো উন্নয়ন:
বন বিভাগের অবকাঠামো উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, পর্যাপ্ত জনবল এবং কার্যকরী পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বন্যপ্রাণীদের জন্য জরুরি সেবাগুলো দ্রুততম সময়ে পৌঁছানো যায়।
এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর হলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ভবিষ্যতে এড়ানো সম্ভব হবে।