31.3 C
Bangladesh
শনিবার, জুন ২১, ২০২৫
spot_img

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অনুমোদনহীন পাহাড় কাটা: পরিবেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ

পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) কর্তৃপক্ষের অনুমোদনবিহীন পাহাড় কাটার ঘটনা পরিবেশগত সমস্যার দিকে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটার অনুমোদন না পেয়েও এই কার্যক্রম শুরু করায় স্থানীয় জনগণ এবং পরিবেশবিদদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

পাহাড় কাটার অগ্রগতি ও বিতর্ক

চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই চট্টেশ্বরী সড়কের গোয়াছিবাগান এলাকার পাহাড় কাটা শুরু করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ভবিষ্যতে ভূমিধস থেকে রক্ষা করতে তারা চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাহাড়কে ঢালু করছে, যা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে, এই পদক্ষেপে অনুমোদনবিহীন কাজ করার অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড়ের একটা অংশ কেটে ফেলা হয়েছে, যা স্থানীয়দের উদ্বিগ্ন করেছে। পুরো এলাকা টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, এবং নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিক্রিয়া

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা জানিয়েছেন, তারা চমেক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদনের জন্য আবেদন পেলেও এখনও তা মঞ্জুর করা হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একটি দল এই পাহাড় কাটা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সমন্বয়ক মনিরা পারভীন বলেছেন, এত বড় মাত্রার পাহাড় কাটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

পাহাড় কাটা পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চট্টগ্রামে পূর্বের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০০ সালে ৬৭৯ হেক্টর এলাকায় পাহাড় কাটা হয়েছিল, যা ২০১২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১,২৯৫ হেক্টরে। এটি ভূমিধস, মাটি ধস, এবং বায়ু দূষণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া, বনজ সম্পদ ধ্বংস এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন বলেন, “সরকারি-বেসরকারি সব কর্তৃপক্ষ যদি পাহাড় কাটে, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাব?” তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলিতে উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ সংরক্ষণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পাহাড় কাটা ছাড়াও উন্নয়ন সম্ভব, যা আমাদের দেশের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।

পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব

জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা

পাহাড়গুলো শুধু মাটি এবং পাথরের স্তূপ নয়, এগুলো অসংখ্য প্রাণীর আবাসস্থল এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছপালা, পশুপাখি, এবং মাটির নিচের ক্ষুদ্র জীববৈচিত্র্য সবই পাহাড়ের ওপর নির্ভরশীল। পাহাড় কাটার ফলে এই জীববৈচিত্র্যের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যায়, যা পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।

ভূমিধস ও জলবায়ুর প্রভাব

পাহাড় কাটা ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ায়, যা মানুষের জীবন ও সম্পত্তির জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বর্ষাকালে এই ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। এছাড়া, পাহাড় কাটা জলবায়ুর ওপরও প্রভাব ফেলে, কারণ এটি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

পানি সংরক্ষণে প্রভাব

পাহাড় এবং তার আশপাশের গাছপালা বৃষ্টির পানি শোষণ করে এবং ভূগর্ভস্থ জলস্তর রিচার্জ করতে সহায়তা করে। পাহাড় কাটা হলে এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে পানি সংকট দেখা দিতে পারে। শহরাঞ্চলে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

মাটি ও বায়ুর গুণমান অবনতি

পাহাড় কাটা হলে মাটির উর্বরতা কমে যায় এবং মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, কাটা পাহাড় থেকে উড়ে আসা ধুলিকণা বাতাসকে দূষিত করে, যা শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই ধুলিকণা বাতাসের গুণমানকে এতটাই নষ্ট করে যে এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে ওঠে।

পাঠকদের জন্য বার্তা

পাহাড় কাটা আমাদের পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বড় হুমকি। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পাহাড় কাটা চলতে থাকলে আমরা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ হারাতে বসবো, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরো তীব্র করবে। আমাদের প্রয়োজন উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা।

আপনার মতামত আমাদের জানান: আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত দিন। আপনি কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারেন তা শেয়ার করুন। আমাদের পোস্টে কমেন্ট করুন এবং পরিবেশ রক্ষার সচেতনতা বাড়াতে এই বার্তা ছড়িয়ে দিন।

পরিবেশ রক্ষায় যোগ দিন: পরিবেশ সংরক্ষণে আপনার অংশগ্রহণ জরুরি। এটি শুধু আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করি এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে মনোযোগ দিই।

এই বার্তা শেয়ার করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় অন্যদের সচেতন করুন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ