কক্সবাজারের চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে এক মাতৃহারা হাতির শাবকটি এখন বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। মাত্র ২ দিনের বয়সী এই শাবকটি প্রতিনিয়ত মাকে খুঁজে চলেছে, কিন্তু তার মাকে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এই ঘটনাটি শুধু একটি শাবকের কষ্টের গল্প নয়, এটি একটি বড় পরিবেশগত সংকটের ইঙ্গিতও দেয়। এমনকি, এই ঘটনা আমাদের পশুপ্রেমী সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে পারে। বন্যপ্রাণী রক্ষা
শাবকটির কষ্ট এবং উদ্ধার
হোয়াইক্যং বন রেঞ্জের আওতায় এক মা হাতি গত ৫ জানুয়ারি তার শাবকটি প্রসবের পর মারা যায়। মা হাতিটির মৃত্যুর ফলে ২ দিনের বয়সী শাবকটি পুরোপুরি একা হয়ে পড়ে। শাবকটির আহাজারি, মায়ের খোঁজে বারবার এদিক-ওদিক তাকানো এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। তবে শাবকটি উদ্ধার হয়ে সাফারি পার্কে পৌঁছানোর পরও তার মনোযোগ পুরোদমে মায়ের প্রতি ছিল।
মায়ের মৃত্যু: কারণ ও প্রভাব
এ ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে অতিরিক্ত ওজনসহ প্রসবজনিত জটিলতা ধরা হয়েছে। ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের মতে, শাবকটির অতিরিক্ত মোটা হওয়া এবং প্রসব বেদনার কারণে মা হাতিটির জরায়ু বেরিয়ে পড়ে, যার ফলে তার মৃত্যু হয়। এই ধরনের ঘটনা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করার পাশাপাশি, পরিবেশে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বন্যপ্রাণী রক্ষা
তবে, কেন এটি পরিবেশগত সংকট?
হাতি এক অন্যতম বিপদাপন্ন প্রজাতি, এবং তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে প্রাণীজগতের ভারসাম্যও বিপন্ন হচ্ছে। শাবকটি মায়ের অভাব বোধ করছে এবং এর মানে হল, পরিবেশের প্রকৃতির পাশাপাশি প্রাণীদেরও নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক উপাদান ছাড়া অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র হাতি নয়, অন্যান্য বন্য প্রাণীর জন্যও বড় হুমকি। বন্যপ্রাণী রক্ষা
বাড়তি চ্যালেঞ্জ এবং বনভূমির সংরক্ষণ
এছাড়াও, বনের ক্ষতি, বনভূমি সংরক্ষণে অবহেলা, অবৈধ শিকার এবং বনাঞ্চলের ক্ষয়-ক্ষতির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন্যপ্রাণী যেমন হাতি, সিংহ, বাঘের মত প্রজাতি আজ বিপন্ন। বাংলাদেশের হাতির সংখ্যা এখন একেবারে সীমিত, যা তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান এবং খাদ্যভাণ্ডার সংকুচিত করছে।
মাহুতের দায়িত্ব: শাবকটির যত্ন
ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের হাতির মাহুত সুশিল চাকমা জানিয়েছেন যে, তিনি যতটা সম্ভব শাবকটির মনোবল শক্ত করতে চেষ্টা করছেন। প্রতিনিয়ত শাবকটি দুধ পান করছে এবং কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু যখনই সে জেগে উঠছে, সে তার মাকে খুঁজছে। মাহুত তার বেদনা কমানোর চেষ্টা করছেন, তবে তা সব সময় সফল হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজের ভূমিকা
এটি শুধু এক শাবকের গল্প নয়, বরং একটি বড় পরিবেশগত সংকটের ছবি। আমাদের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণ, বনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, অবৈধ শিকার বন্ধ করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি, এসবের মাধ্যমেই আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ, সবুজ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি।
হাতির শাবকটি যখন তার মাকে খুঁজে ফিরছে, তখন আমরা যারা পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সচেতন তাদের জন্য এটি একটি বড় সংকেত। বন্যপ্রাণী রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এখন সময়ের দাবী।
CTA (Call-to-Action) আপনারাও যদি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য কিছু করতে চান, তবে পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বাড়ান, বনভূমি রক্ষা করতে অংশ নিন এবং প্রকৃতির সহিত মানব সমাজের সম্পর্ক স্থাপন করুন।