32.3 C
Bangladesh
শনিবার, জুন ২১, ২০২৫
spot_img

ঢাকার পরিবেশ রক্ষায় রাজউকের কঠোর পদক্ষেপ—জলাশয় ভরাট বন্ধ হবে তো?

প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন হওয়ার পথে

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার আশপাশে জলাশয় এবং কৃষিজমি ভরাট অব্যাহত থাকছে। বিশেষ করে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় এসব কার্যকলাপ নিয়মিত হয়ে উঠেছে, যা পরিবেশ এবং নগরের স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সম্প্রতি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) তাদের অভিযানে জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাট বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি, রাজউক নগর পরিকল্পনা শাখার অধীনে একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে, যেখানে অবৈধভাবে বালু ভরাট করা এবং প্রকল্পের সীমানা ভেঙে ফেলা হয়েছে। জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাট

অভিযানের বিস্তারিত: কী ঘটেছিল?

রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট মো. কামরুল ইসলাম-এর নেতৃত্বে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়। এ সময় অবৈধভাবে বালু ভরাট ও প্লটিং করার জন্য দুই প্লটের মালিককে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া, ৬টি প্লটের সীমানা প্রাচীর ভেঙে দেওয়া হয় এবং ৪টি ডেজিং মেশিনের পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়।

এই অভিযানে রাজউক কর্তৃপক্ষ ড্যাপ (বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) এর আওতায় জলাশয় ও কৃষিজমি রক্ষার জন্য তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। যদিও রাজউক নিয়মিতভাবে এমন অভিযান পরিচালনা করছে, তবুও অবৈধ নির্মাণ কার্যক্রম থামানো যাচ্ছে না। জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাট

কেন এই অভিযান গুরুত্বপূর্ণ?

জলাশয় এবং কৃষিজমি ভরাট শুধু যে পরিবেশগত ক্ষতি সৃষ্টি করে, তা নয়। এটি নগরীর পানি নিষ্কাশন, বৃষ্টির জল ধারণ, এবং ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। কৃষি জমির ভরাটের কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে। একইভাবে, জলাশয়গুলোর ভরাটে নগরী ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে, ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাটের ফলে এই দুর্বল ব্যবস্থা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। যখন বৃষ্টি হয়, তখন শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে বিভিন্ন ধরনের বিপদ দেখা দেয়।

রাজউকের পদক্ষেপ ও প্রশাসনিক উদ্যোগ

রাজউক ইতিমধ্যে ড্যাপ অনুযায়ী জলাশয় ও কৃষিজমি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে, স্থানীয়দের এবং বিভিন্ন সংস্থার মাঝে সহযোগিতা বাড়ানো জরুরি। বিশেষত, কৃষিজমি ও জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং তা আটকাতে আইনি ব্যবস্থা আরো কঠোর হতে হবে।

এছাড়া, অভিযানে এলজিইডি (স্থানীয় সরকার, প্রকৌশল ও প্রকল্প বিভাগের) কর্তৃক একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজের ব্যাপারেও অবৈধ পদক্ষেপ চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং নকশা এবং রাজউকের অনাপত্তিপত্র জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার উপায় কী?

জলাশয়, কৃষিজমি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য রাজউকের পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। তবে, শুধুমাত্র প্রশাসনিক উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। জনগণের সহযোগিতা এবং সচেতনতা ছাড়া এই ধরনের অভিযান সফল হবে না। এক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

উপসংহার

রাজউক-এর সম্প্রতি পরিচালিত অভিযানে ঢাকার পরিবেশগত সংকট এবং নির্মাণ কার্যক্রমের প্রভাব নতুন করে সামনে এসেছে। জলাশয় এবং কৃষিজমি ভরাট বন্ধের জন্য রাজউক এবং প্রশাসনিক উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর পাশাপাশি, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কড়া আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। এতে করে আমরা নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব নগরী নির্মাণের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে যেতে পারব।

CTA: আপনার মতামত জানাতে মন্তব্য করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় অংশগ্রহণ করুন। রাজউক-এর এই উদ্যোগকে সমর্থন দিতে শেয়ার করুন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ