আজ বুধবার সকালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। সকাল সাড়ে আটটার দিকে আইকিউ এয়ারের মানসূচকে ঢাকার সার্বিক বায়ুর মান ছিল ৫১৮। বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুর মান ৩০০ পার হলেই তা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে ঢাকার কিছু স্থানে এই মান ১০০০ পার হয়ে গেছে। রাজধানীর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকার বায়ুর মান ছিল ১০৮৫, গোরানে ৮২৭, কল্যাণপুরে ৬৬৩ এবং গুলশান লেক পার্কে ৬৪৮। এমন ভয়াবহ দূষণ সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি, যা একদিকে মানুষের শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসের রোগ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ঢাকার বায়ু মান
বায়ুদূষণের মূল কারণ
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বস্তুকণা। এই ক্ষুদ্র কণাগুলো এমন সূক্ষ্ম যে তা সহজেই শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে, যা শারীরিক ক্ষতি করতে পারে। ঢাকার বায়ুতে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬৭ গুণ বেশি। এছাড়া, ঢাকার বায়ুদূষণের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য হলো শিল্পকারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণস্থলের ধুলা এবং ইটভাটার ধোঁয়া। এসব কারণে প্রতি বছর বায়ু মানের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, যা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। ঢাকার বায়ু মান
বায়ুদূষণের প্রভাব
বায়ুদূষণের প্রভাবে মানুষের শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং দীর্ঘমেয়াদি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া, দূষণের ফলে ঢাকার পরিবেশে গভীর ক্ষতি হচ্ছে। শহরের সবুজায়ন কমে যাচ্ছে, বনভূমির ক্ষতি হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্যও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এটি ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে।
দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
আইকিউ এয়ারের পরামর্শ হলো, ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং খোলা স্থানে ব্যায়াম না করার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া, ঘরের জানালা বন্ধ রাখা জরুরি যাতে বাইরে থেকে বিষাক্ত বায়ু ঘরে প্রবেশ না করে। প্রাকৃতিক দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের উচিত বাসস্থান এবং কর্মস্থলে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং বায়ু পরিষ্কার রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বায়ুদূষণ মোকাবিলায় করণীয়
ঢাকার বায়ুদূষণের অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য সরকার, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। পরিবেশগত সচেতনতা বাড়ানো, কার্যকরী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, নতুন আইন তৈরি এবং ইটভাটা, শিল্পকারখানার বিষাক্ত নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের উচিত শক্তিশালী পরিবেশ আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করা, যাতে বায়ুদূষণের মাত্রা কমানো যায়। তাছাড়া, শহর এলাকায় গাছ লাগানো এবং সবুজ অঞ্চল বৃদ্ধি করা দরকার যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
শেষ কথা
আজকের ভয়াবহ দূষণ যে বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমাদের সকলের সচেতনতা এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ঢাকার পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় সবাইকে একযোগভাবে কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।