পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত ২১ দিনের দূষণবিরোধী অভিযানটি সবার নজর কাড়ছে। এই সময়কালে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি খাতের দূষণ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করা হয়েছে। এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত তুলে ধরব এ অভিযানের ফলাফল, পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে এর প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা। দূষণবিরোধী অভিযান
মোবাইল কোর্টের সাফল্য: জরিমানা ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ
গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ২১ দিনে পরিবেশ অধিদফতরের ২০৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এ সময়ে ৫৩৩টি মামলায় মোট ৭ কোটি ৮৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
- ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান:
- পরিবেশ দূষণের দায়ে ৮৮টি ইটভাটার চিমনি ভেঙে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, ৫৬টি ইটভাটা বন্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং সাতটি ইটভাটার কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয়েছে।
- অবৈধ ব্যাটারি কারখানা:
- পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের ছয়টি ট্রাক সিসা বা ব্যাটারি গলানোর যন্ত্রপাতি জব্দ করে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ পলিথিন উচ্ছেদ অভিযানে পদক্ষেপ
নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয় ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়।
- ২৬৯টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫৩৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
- মোট ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয় এবং আনুমানিক ৯৯ হাজার ১৩২ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। দূষণবিরোধী অভিযান
- ৮টি পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা সিলগালা এবং সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
২৩ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ১১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এতে ২১টি মামলায় ৮৭ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় এবং ১,৬৬১ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়।
বায়ুদূষণ রোধে দৃঢ় অবস্থান
ঢাকার রমনা, খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, গুলশান ও মোহাম্মদপুর এলাকায় কালো ধোঁয়া নির্গমন ও নির্মাণ সামগ্রী থেকে বায়ুদূষণের অভিযোগে ১২টি মামলায় ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
- পাবনায় একটি চারকোল কারখানার বায়ুদূষণের দায়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
- শেরপুরে শব্দদূষণের দায়ে দুটি গাড়ির চালককে ৩ হাজার টাকা জরিমানা এবং সাতটি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করা হয়।
অভিযানের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে এই অভিযানগুলো সবার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে—পরিবেশ সুরক্ষায় সরকার কঠোর এবং নিয়মিতভাবে এ অভিযান চালাবে।
- দূষণবিরোধী এই কার্যক্রম শুধু জরিমানা বা শাস্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং পরিবেশের সুরক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিও এর অন্যতম লক্ষ্য।
- অবৈধ ইটভাটা, নিষিদ্ধ পলিথিন এবং অন্যান্য দূষণ সৃষ্টিকারী কার্যক্রম বন্ধে নিয়মিত নজরদারি ও আইন প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ভূমিকা
দূষণবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখা জরুরি। পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে উদ্যোগই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী নিশ্চিত করতে পারে।
আপনার মতামত দিন:
আপনার এলাকায় পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? নিচে কমেন্টে জানান! আমাদের পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগে আপনিও অংশ নিন।