গাজীপুরের ভাওয়াল রেঞ্জে বন বিভাগের ৩ একর জমি উদ্ধার অভিযানের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এই জমির দখল হয়ে যাওয়ার কারণে বনভূমির পরিবেশগত গুরুত্ব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। দখলকারীরা বনভূমিতে অবৈধভাবে নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল, যা শুধুমাত্র পরিবেশের ক্ষতি করছিল না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছিল। গাজীপুরে ভূমিদস্যু
বন বিভাগের এই অভিযান শুধু একযোগভাবে সরকারী কর্তৃপক্ষের কাজের সফলতা নয়, এটি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এক অগ্রণী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যায়।
অভিযানের বিস্তারিত: কীভাবে পরিচালিত হয়েছিল?
গত ২৬ জানুয়ারি গাজীপুর জেলার ভবানীপুর বিটে বন বিভাগের জমি উদ্ধার করতে অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে অংশ নেন জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ এবং বন বিভাগ—সর্বত্র মিলিত প্রচেষ্টার একটি সফল উদাহরণ। অভিযানে ৩ একর জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং ওই জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
অভিযানটি রাজধানী ঢাকা থেকে এক ঘণ্টা দূরের ভবানীপুর বিট এলাকায় পরিচালিত হয়, যেখানে ভূমিদস্যুরা বনভূমি দখল করে অবৈধভাবে বাড়ি নির্মাণ করেছিল। অভিযানে জমির মালিকানা এবং এর পরিবেশগত গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
ভূমিদস্যুদের অবৈধ কার্যকলাপ: এক চিত্র
এই ভূমিদস্যুদের কার্যকলাপ যে শুধু দেশের পরিবেশের জন্য হুমকি, তা নয়, তাদের দখলে থাকা বনভূমির উপর নির্ভরশীল স্থানীয় জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশেও বিপর্যয় ঘটছে। বনভূমি দখলকারীরা শুধু অবৈধ বসতিবাড়ি তৈরি করছেন না, তাদের গড়ে তোলা স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট এবং দোকান, যা স্থানীয় মানুষের মধ্যে বাড়ি ভাড়া দেয়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে। এই ধরনের দখলদারি পরিবেশের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে। গাজীপুরে ভূমিদস্যু
এদিকে, বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা পূর্বে আরো দুটি অভিযান পরিচালনা করেছেন, যেখানে অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে, বনভূমি দখল এখনও অব্যাহত ছিল, ফলে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।
সরকারের বার্তা: ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ
বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, বনভূমি রক্ষা করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযান আরও তীব্র করা হবে। তিনি ভূমিদস্যুদের সতর্ক করে বলেন, যারা এখনো অবৈধভাবে বনভূমি দখল করে বসবাস করছে, তাদের উচিত দ্রুত স্বেচ্ছায় সরে আসা, নয়তো অভিযানে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
এক ইঞ্চি বনভূমি দখল করা হোক বা বড় এলাকা—সরকারি উদ্যোগে এটি আর সহ্য করা হবে না, নিশ্চিতভাবে উচ্ছেদ করা হবে। তাই দখলকারীদের জন্য সরকারের বার্তা খুবই স্পষ্ট: অবৈধ দখল ছাড়ুন, অথবা এর ফল ভোগ করুন।
বনভূমি রক্ষায় প্রভাব: জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রতিবেশ
বনভূমি শুধু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বনগুলো কার্বন শোষণ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের গতিপথকে ধীর করে, এবং জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষায় সহায়ক। কিন্তু যখন এই বনভূমি অবৈধভাবে দখল করা হয়, তখন এসব উপকারিতা একেবারে শূন্যে চলে যায়।
বনভূমি দখল এবং এর ক্ষতি পরিবেশের ক্ষেত্রে শুধু সাময়িক নয়, দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে। বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা জলবায়ু পরিবর্তনকে আরো ত্বরান্বিত করে, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সরকারের দৃঢ় অবস্থান: ভবিষ্যত পদক্ষেপ
পরিবেশ রক্ষায় সরকারের দৃঢ় অবস্থান আরো দৃঢ় হচ্ছে। বনভূমি দখলকারী যে কোনো শক্তির বিরুদ্ধে সরকার কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে এবং এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে সাধারণ জনগণের সচেতনতা তৈরি করা হবে, যাতে তারা বনভূমি রক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
এছাড়া, সরকারের ভূমির অবৈধ দখল বন্ধ করার পাশাপাশি, জনগণের মধ্যে পরিবেশের গুরুত্ব এবং এর প্রতি দায়িত্ববোধ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হবে।
শেষ কথা: আমাদের দায়িত্ব
পরিবেশ রক্ষায় বনভূমি অপরিহার্য, এবং এর সুরক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব। বনভূমি দখল, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, এবং এর ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে সরকার যে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তাতে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। একত্রিতভাবে আমাদের বনভূমি রক্ষা করা এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা একটি মহৎ লক্ষ্য, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অতি জরুরি।
আপনার মতামত কী? আপনি কি বনভূমি রক্ষার জন্য আরও উদ্যোগ গ্রহণের পক্ষের? নিচে কমেন্টে জানান এবং পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সচেতন করতে পোস্টটি শেয়ার করুন।