রাজধানীর চকবাজারে অভিযান চালাতে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মো. শওকত আলী হামলার শিকার হয়েছেন, যা পরিবেশ অধিদপ্তরের কঠোর অভিযানকেও বাধাগ্রস্ত করেছে। এই ঘটনায় আমাদের সামনে উঠে এসেছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অপরাধমূলক কার্যকলাপের এক অন্ধকার দিক, যা আমাদের পরিবেশের ভবিষ্যৎকে আরও বড় বিপদে ফেলতে পারে। পলিথিন কারখানায় অভিযান
গত রোববার, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের নেতৃত্বে একটি অভিযান শুরু হয় চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায়, যেখানে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির একটি কারখানায় অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছিল। অভিযান চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি সত্ত্বেও পলিথিন কারখানার কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আহত হন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক শওকত আলী, যিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পরিবেশগত সংকট:
পলিথিনের ব্যবহার আমাদের পরিবেশের জন্য এক বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরিবেশ দূষণকারী উপাদান হিসেবে পরিচিত, কারণ এটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এবং সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা না হলে দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশে থেকে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিথিন কারখানা অবৈধভাবে চালিয়ে যাওয়া, এসব কারখানার কর্মীদের আইনকে অবজ্ঞা করার প্রবণতা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপর আক্রমণ করে তারা যে সংকট তৈরি করেছে, তা আমাদের পরিবেশের আরও ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিন কারখানায় অভিযান
হামলা:
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযানে পাওয়া মালামাল, মেশিন এবং অন্য সামগ্রী জব্দ করার পর, হামলাকারীরা আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করে। এছাড়া, তারা পলিথিন তৈরির কারখানা সিলগালা করার পরও এই সহিংসতা চালায়। হামলার ফলস্বরূপ, এক কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ধরনের হামলা কেবল আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় না, বরং পরিবেশের সুরক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করে।
পরিবেশের উপর প্রভাব:
এই ঘটনার মাধ্যমে আমাদের বুঝতে হবে, যে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেই কাজগুলি করছে, তা কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং কারখানার মালিকদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পলিথিন ও অন্যান্য পরিবেশ দূষণকারী উপাদান ব্যবহারের ফলে দেশব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। নদী, খাল, জলাশয় এবং সাগরের জল দূষিত হচ্ছে, বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে, এবং মানবস্বাস্থ্যও এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কি করা উচিত:
এই ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ আরও কঠোর হওয়া উচিত। একই সাথে, পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আইন বাস্তবায়ন আরও শক্তিশালী করা দরকার। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং অভিযানে গিয়ে তাদের উপর আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
উপসংহার:
এটি একটি বড় সতর্কতার সংকেত। পলিথিন কারখানায় অভিযান চলাকালে হামলার ঘটনা আমাদের দেশের পরিবেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বড় প্রশ্ন তৈরি করছে। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সকলকে আরও সচেতন হতে হবে, এবং পলিথিন দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, তবেই আমরা এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।