এক উপেক্ষিত সঙ্কট
সম্প্রতি, রাজশাহী বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা সেবার বিস্তার ঘটেছে, সেই সাথে বেড়ে চলেছে হাসপাতালগুলির চিকিৎসা বর্জ্যের পরিমাণ। যেখানে একদিকে স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে অন্যদিকে এই বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্কাশন বা ব্যবস্থাপনা না হওয়ায় এটি সৃষ্টি করছে এক নতুন সঙ্কট। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাড়ছে ভাইরাসজনিত রোগের ঝুঁকিও। আসুন, আজকে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব রাজশাহী বিভাগের হাসপাতালগুলির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বর্তমান চিত্র এবং এর প্রভাব কী। রাজশাহীতে হাসপাতাল বর্জ্য
হাসপাতাল বর্জ্যের সঙ্কট: বেড়ে চলা হুমকি
রাজশাহী বিভাগে হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলির সেবা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে একই সঙ্গে সেগুলির উৎপন্ন হওয়া চিকিৎসা বর্জ্যও বেড়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি, যেখানে প্রতি দিন ৩,০০০ রোগী সেবা নেন, সেখানে উৎপন্ন হয় বিপুল পরিমাণ বর্জ্য—যার মধ্যে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, রক্ত, ব্যান্ডেজ, ক্যাথিটার এবং এমনকি কেটে ফেলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসহ নানা ধরনের বর্জ্য থাকে। কিন্তু এই বর্জ্যগুলি সঠিকভাবে সংগ্রহ বা নিষ্কাশন না হওয়ায় সেগুলি হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহীতে হাসপাতাল বর্জ্য
রাজশাহীর প্রায় ১৫০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। এ কারণে পরিবেশ দূষণ এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় কী হচ্ছে?
রাজশাহী বিভাগের হাসপাতালগুলির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। বিশেষ করে, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে নেই কোনো ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট যা মেডিকেল বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্কাশন করতে সাহায্য করবে। যদিও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, এই বর্জ্য সংগ্রহ করে, তবে এটি যথেষ্ট নয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির তিনটি ক্যাটাগরিতে বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা থাকলেও, চুল্লিতে পোড়ানোর ব্যবস্থা সীমিত হওয়ায় বেশিরভাগ বর্জ্য অপসারিত হয় না এবং হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
সংকটের কারণ: বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতালগুলির জন্য প্রধান সমস্যা হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের অভাব। প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন যে বর্জ্য সংগ্রহ এবং ধ্বংস করার কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাও পরিপূর্ণ সমাধান নয়। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নাটোর সদর হাসপাতালসহ ১৮৬টি ক্লিনিকেও একই ধরনের সমস্যা রয়েছে। এসব বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ করা না হলে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়বে, বিশেষ করে এইচআইভি, হেপাটাইটিস এবং টিটেনাসের মতো রোগ।
সরকারী উদ্যোগ: ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
এদিকে, রাজশাহী বিভাগের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবা খাতুন জানিয়েছেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অন্য হাসপাতালগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আরও পরিকল্পনার প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে, তবে কার্যকরী উদ্যোগের অভাব এখনও স্পষ্ট।
উপসংহার: পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
রাজশাহীর হাসপাতালগুলিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে গভীর সমস্যা বিদ্যমান, তা অবিলম্বে সমাধান করা জরুরি। চিকিৎসা বর্জ্যের সঠিক নিষ্কাশন এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সরকারের পাশাপাশি, স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির সম্মিলিত উদ্যোগে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।
আপনার মতামত শেয়ার করুন
আপনি কি মনে করেন? রাজশাহীতে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!