25.9 C
Bangladesh
শুক্রবার, জুন ২০, ২০২৫
spot_img

সুন্দরবনে শিকারিদের তাণ্ডব: জবাই করা হরিণ উদ্ধার, চারজনের বিরুদ্ধে মামলা

সুন্দরবন, আমাদের গর্ব এবং পৃথিবীর ম্যানগ্রোভ অরণ্যের রত্ন। কিন্তু এই বন আজ নানা হুমকির সম্মুখীন, যার মধ্যে অন্যতম হলো হরিণ শিকার। সাতক্ষীরা রেঞ্জের মীরগাং টহল ফাঁড়ির কাছে জবাই করা একটি হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। বন বিভাগের উপস্থিতি টের পেয়ে হরিণ শিকারিরা পালিয়ে যায়। জবাই করা হরিণ উদ্ধার

গত রবিবার রাত ১০টায় উদ্ধার হওয়া এই মৃত হরিণটি সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি বিপদসংকেত। বনকর্মীরা এ সময় হরিণ ধরার জন্য ব্যবহৃত ২৭টি ফাঁদও উদ্ধার করেন।

সুন্দরবনে হরিণ শিকার: কীভাবে ঘটে এই অপরাধ?

বনকর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, শিকারিরা অত্যন্ত গোপন পন্থায় ফাঁদ ব্যবহার করে সুন্দরবনের হরিণ শিকার করে। এক সপ্তাহ আগে বন বিভাগ আরও ৪০টি ফাঁদ উদ্ধার করেছিল। শিকারি চক্র শুধু বন্যপ্রাণী হত্যা করেই ক্ষান্ত নয়, বরং বনকর্মীদের হুমকি দেয় এবং টহল কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে।

হাবিবুল ইসলাম, সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ অফিসার, জানান, শিকারি চক্রের সদস্যরা বন বিভাগের স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর হামলাও চালিয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, কারণ এটি বন বিভাগের কার্যক্রমের ওপর সরাসরি আঘাত। জবাই করা হরিণ উদ্ধার

অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা: মামলা দায়ের

মীরগাং টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া চারজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। যদিও আসামিদের একজন, আনিছুর রহমান, শিকারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, স্থানীয় প্রতিপক্ষরা তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

এদিকে, বনকর্মীদের মতে, এটি কোনো একক ঘটনা নয়। সুন্দরবনের হরিণ শিকার ও বন্যপ্রাণী ধ্বংসের ঘটনা বারবার ঘটছে।

পরিবেশ বিপর্যয়: হরিণ শিকারের প্রভাব

হরিণ শিকার শুধু একটি অপরাধ নয়, এটি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সুন্দরবনের হরিণ বনজ ইকোসিস্টেম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এদের সংখ্যা কমে গেলে হুমকিতে পড়ে পুরো খাদ্যশৃঙ্খলা।

হরিণ শিকারের ফলে বনজ বাঘ, চিতল হরিণসহ অন্যান্য প্রাণীদের খাবারের উৎস সংকুচিত হয়। দীর্ঘমেয়াদে এই প্রভাব সুন্দরবনের টিকে থাকার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।

বনকর্মীদের জন্য ঝুঁকি এবং বন বিভাগের ভূমিকা

হরিণ শিকার ঠেকাতে বনকর্মীরা রাতদিন কাজ করছেন। কিন্তু শিকারি চক্রের হুমকি এবং হামলা তাদের কাজকে কঠিন করে তুলছে। সুন্দরবন রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সচেতনতা এবং সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের করণীয়

১. সচেতনতা বৃদ্ধি: স্থানীয় জনগণ এবং পর্যটকদের বন রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

২. শিকার প্রতিরোধ: বনকর্মীদের সুরক্ষা এবং টহল কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন।

৩. আইনি ব্যবস্থা: বন্যপ্রাণী হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. স্থানীয় অংশগ্রহণ: স্থানীয় বাসিন্দাদের বন সংরক্ষণ কার্যক্রমে যুক্ত করা যেতে পারে।

শেষ কথা

সুন্দরবন আমাদের জাতীয় গর্ব এবং পরিবেশের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু হরিণ শিকার ও অন্যান্য অপরাধ এই বনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এখনই সময় সবাই মিলে সুন্দরবন রক্ষায় এগিয়ে আসার।

আপনার মতামত দিন! হরিণ শিকার ঠেকাতে কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? আপনার মতামত কমেন্টে শেয়ার করুন এবং সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের এই প্রচেষ্টায় অংশ নিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ