গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশজুড়ে ৭০০ থেকে ১,৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত **লোডশেডিং** হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এই সংকট মোকাবিলায় তিনি **শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)**-এর ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এই পদক্ষেপ শুধু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ই নয়, বরং **পরিবেশ সংরক্ষণ** এবং **জলবায়ু পরিবর্তন** মোকাবিলার দিকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসি ব্যবহারে কড়াকড়ি
বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণ ও সম্ভাব্য প্রভাব
বিদ্যুৎ উপদেষ্টার মতে, গ্রীষ্মের তীব্র তাপমাত্রায় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮,০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে। অথচ বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এর চেয়ে কম। এর প্রধান কারণ হলো এসির অত্যধিক ব্যবহার। একটি এসি গড়ে ১.৫ থেকে ৩ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। শহরাঞ্চলে বাড়ি, অফিস এবং শপিংমলে এসির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ খরচ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফাওজুল কবিরের পরামর্শ হলো: এসির তাপমাত্রা ২৫-২৬°সে.-এ রাখলে বিদ্যুৎ খরচ ৩০-৪০% কমানো সম্ভব। এতে ২,০০০ থেকে ৩,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, যা লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করবে।
রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে সরকারি প্রস্তুতি
আসন্ন রমজান মাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে দিনে ৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলেও রমজানে তা ১২০ কোটি ঘনফুট-এ উন্নীত করা হবে। বাড়তি গ্যাস পেট্রোবাংলার মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে শুধু গ্যাস আমদানি বাড়ালেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। জ্বালানি দক্ষতা এবং সচেতনতাই এই সংকট কাটানোর মূল হাতিয়ার। এসি ব্যবহারে কড়াকড়ি
এসির ব্যবহার কমাতে কী করা হবে?
১. সচেতনতা কার্যক্রম: টেলিভিশন, মসজিদের ইমাম এবং সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে এসির যৌক্তিক ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য প্রচার করা হবে।
২. অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন: বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে।
৩. প্রযুক্তিগত সমাধান: এসির থার্মোস্ট্যাট ২৫-২৬°সে.-এ সেট করার পরামর্শ দেওয়া হবে।
ফাওজুল কবিরের মতে, “এসির তাপমাত্রা ১৬-১৮°সে. থেকে বাড়িয়ে ২৫°সে. করলে শুধু বিদ্যুৎই সাশ্রয় হয় না, বরং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও কমে।”
অঞ্চলভেদে লোডশেডিং: ময়মনসিংহ বনাম ঢাকা
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা স্বীকার করেছেন, **ময়মনসিংহ অঞ্চলে** লোডশেডিং তুলনামূলক বেশি। এর প্রধান কারণ হলো এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। অন্যদিকে, **ঢাকায়** লোডশেডিং তীব্র হওয়ার কারণ হলো শহরাঞ্চলে এসি ও শিল্পের চাপ। ঢাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় সরবরাহের ঘাটতি বেশি দেখা যায়। তবে সরকার এই বৈষম্য কমানোর চেষ্টা করবে বলেও জানানো হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে কি?
বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর চাপ থাকলেও **অন্তর্বর্তী সরকার** এই মুহূর্তে দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা করছে না। বর্তমান গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত রাখা হবে। তবে **নতুন সংযোগ** নেওয়া ব্যবহারকারীদের জন্য দাম বাড়ানো হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের দায়িত্ব
এসির অত্যধিক ব্যবহার শুধু বিদ্যুৎ খরচই বাড়ায় না, এটি **গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের**ও কারণ। এর প্রভাবে বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। তাই এসি ব্যবহার কমিয়ে আমরা শুধু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ই নই, বরং **পরিবেশ রক্ষায়**ও ভূমিকা রাখতে পারি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যেকের ছোট ছোট পদক্ষেপই বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
কীভাবে সাহায্য করতে পারেন আপনি?
- – এসির তাপমাত্রা ২৫°সে.-এ রাখুন।
- – প্রাকৃতিক বায়ু চলাচলের জন্য ঘরের জানালা খুলে দিন।
- – অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ এড়িয়ে চলুন।
- – পরিবেশবান্ধব অভ্যাস গড়ে তুলুন।
কল-টু-অ্যাকশন (CTA): গ্রীষ্মের এই সংকটে আপনার ছোটো পদক্ষেপই পারে বড় পরিবর্তন আনতে। এসির ব্যবহার কমিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অংশ নিন। এই পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদেরও সচেতন করুন। মন্তব্যে জানান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আপনি কী করছেন?