25.2 C
Bangladesh
বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫
spot_img

পরিবেশের বিপর্যয়: বিদ্যুৎকেন্দ্রের ধোঁয়ায় তিন গ্রামের হাহাকার

বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণে জনজীবন বিপর্যস্ত

ঠাকুরগাঁও জেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এনার্জিপ্যাক পাওয়ার ভেঞ্চার (ইপিভি) ঠাকুরগাঁও লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্গত কালির কারণে তিনটি গ্রামের প্রায় হাজার খানেক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। চার বছর ধরে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত এই উড়ন্ত কালি বাতাসের সঙ্গে মিশে আশপাশের পরিবেশে প্রভাব ফেলছে। এই দূষণের ফলে বাড়িঘর, বিদ্যালয়, মাঠ, ফসলের খেত, এবং গাছপালায় কালির আস্তরণ জমে যাচ্ছে, যা জনজীবন এবং কৃষিকাজে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সংকট

বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষতি

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কালির আস্তরণ ঘরের টিনের চালে জমে মরিচা ধরিয়ে ফুটো করে দিচ্ছে। এতে অনেকেই নতুন চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু বাড়িঘর নয়, বিদ্যালয়ের ছাদ, মাঠ এবং এলাকার অন্যান্য স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রভাব পড়ছে কৃষিখাতে। ফসলের জমিতে কালির আস্তরণ জমে উৎপাদন কমে গেছে। কৃষকরা জানান, ধান, সবজি, এবং অন্যান্য শস্যের গুণগত মান এবং ফলন কমে যাচ্ছে, যা তাদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হচ্ছে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং জীবনযাপনের সংকট

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত কালির কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসজনিত সমস্যা এবং ত্বকের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর এর প্রভাব বেশি। দূষণযুক্ত বাতাসে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

প্রতিবাদে বিক্ষোভ

পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এবং কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফটকে ধাক্কা দেয়, যার ফলে কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সংকট

প্রশাসনের হস্তক্ষেপ

সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন রায়হান মোহাম্মদ শাহরিয়ার এবং সদর থানার ওসি শহিদুর রহমান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের নাম এবং ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করতে বলেন। এই আশ্বাসের পর বিক্ষোভকারীরা শান্ত হন এবং বাড়ি ফিরে যান।

ক্ষতিপূরণের দাবি

স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানালেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আলম হোসেন, আলতাফ হোসেন এবং কবির আলী জানান, তাদের বাড়ির টিনের চাল নষ্ট হয়ে গেছে, এবং ফসলের ক্ষতি ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা তাদের জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে। তারা দ্রুত ক্ষতিপূরণ এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধান দাবি করেছেন।

পরিবেশ রক্ষায় আমাদের ভূমিকা

এই ধরনের দূষণ প্রতিরোধে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করলেই হবে না। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখার। সচেতনতা বৃদ্ধি করে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে দূষণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে হবে।

সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য পদক্ষেপ

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত কালির দূষণ প্রতিরোধে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা জরুরি। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের উচিত দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিদর্শন এবং আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ নিশ্চিত করা দরকার।

শেষ কথা

বিদ্যুৎকেন্দ্রের এই দূষণ জনজীবন এবং পরিবেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন হওয়া এবং এই দূষণ প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করা। আসুন, পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলি।

আপনার মতামত শেয়ার করুন: আপনার এলাকায় পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? এই সমস্যার সমাধানে আপনার কী পরামর্শ? নিচে কমেন্ট করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ