রাজধানীতে যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ
রাজধানী ঢাকায় দিন দিন খোলা স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ বাড়ছে। সিটি করপোরেশনের যথাযথ নজরদারি ও পরিকল্পনার অভাব এবং নাগরিকদের অসচেতনতার কারণে শহরের পরিবেশ মারাত্মক দূষণের শিকার। রাস্তার পাশে খোলা ডাস্টবিনের অভাবে মানুষ যত্রতত্র ময়লা ফেলছে, যা শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যহীনতাও সৃষ্টি করছে।
একটি আধুনিক শহরের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখন পর্যন্ত এই দিকটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশনের ভূমিকা
২০০৯ সালের সিটি করপোরেশন আইন অনুসারে, করপোরেশনকে ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট পাত্র বা ডাস্টবিন স্থাপন করতে হবে এবং নাগরিকদের সেসব ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ডাস্টবিনের অভাবে বাসাবাড়ির বর্জ্য সড়কে ফেলা হচ্ছে।
২০১৬ সালে ঢাকার দুই সিটিতে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১ হাজার ডাস্টবিন স্থাপন করা হলেও সেগুলো টেকসই হয়নি। অপরদিকে, কিছু এলাকায় স্থাপন করা স্মার্ট ডাস্টবিনও কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়নি। এসব প্রকল্প সঠিক তদারকি এবং নাগরিকদের সচেতনতার অভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
মানুষের অসচেতনতা ও ময়লা ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে কিংবা দোকান-বাড়ির সামনে ময়লা পড়ে থাকছে। সিটি করপোরেশনের ঝাড়ুদারদের পরিষ্কার করার দায়িত্ব থাকলেও নিয়মিত কাজ না করায় এ পরিস্থিতি আরও গুরুতর হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রধান সড়কে ডাস্টবিন স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে বাসাবাড়ি কিংবা দোকানপাটের বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপিত হতে পারে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতির প্রভাব: পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন
ময়লা-আবর্জনার সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব শুধু নগরের পরিবেশ দূষণই করছে না, বরং জলবায়ুর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে বায়ুদূষণ এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে জলাবদ্ধতা এবং তাপমাত্রার বৃদ্ধির মতো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে শহর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ময়লা-আবর্জনা থেকে নিঃসৃত মিথেন গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। তাই, দূষণ কমাতে এবং জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় ময়লা ব্যবস্থাপনা উন্নত করা অত্যন্ত জরুরি।
সমাধান: একটি সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন
১. সঠিক ডাস্টবিন স্থাপন: এলাকাভিত্তিক ডাস্টবিন স্থাপন করে এবং সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করে কার্যকরী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
২. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: মানুষকে আবর্জনা সঠিক স্থানে ফেলার জন্য সচেতন করতে কমিউনিটি কার্যক্রম ও প্রচারণা চালানো।
৩. প্রযুক্তির ব্যবহার: স্মার্ট ডাস্টবিন এবং রিয়েল-টাইম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো প্রযুক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৪. কঠোর নজরদারি: সিটি করপোরেশনের নিয়মিত তদারকি এবং কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
শেষ কথা: নাগরিক দায়িত্ব ও পরিবেশ সুরক্ষা
রাজধানীকে দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য করতে নাগরিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশনকে সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, তবে নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
আপনার মতামত দিন! পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এই পোস্টটি শেয়ার করুন এবং মন্তব্যে আপনার মতামত জানিয়ে দিন। একটি পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তুলতে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে পারি।