তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অবৈধভাবে ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে, যা স্থানীয় কৃষকদের জন্য বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করেছে। কৃষি জমির ক্ষতি, জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি এবং ফলন কমে যাওয়ার কারণে স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া, এই অবৈধ কার্যক্রম পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে, যা একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কা আরও বাড়াচ্ছে এবং অন্যদিকে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ভেঙে পড়ছে। তাড়াশে অবৈধ পুকুর খনন
ফসলি জমির ক্ষতি: পুকুর খননের প্রতিবন্ধকতা
হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের আশপাশের এলাকার কৃষকরা জানান, তাদের আবাদযোগ্য জমিতে নিয়মিত তিনটি ফসল আবাদ করা হয়ে থাকে, যার মধ্যে বোরো ধান, রোপা আমন এবং সরিষা অন্যতম। কিন্তু, সেখানে বর্তমানে অবৈধভাবে পুকুর খনন করার কারণে তাদের জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিশেষত, মহাসড়কের বুনা মারা কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে পানি উজান থেকে ভাটির দিকে নামতে পারছে না। এর ফলে বিলের উজান থেকে পানি নামার সুযোগ না পাওয়ায় কৃষকরা সেচের অভাবে তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। তাড়াশে অবৈধ পুকুর খনন
জলাবদ্ধতা ও কৃষি উৎপাদনে পতন
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুকুর খননের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, যার প্রভাব সরাসরি কৃষির ওপর পড়ছে। এমনিতেই, এক দশকের মধ্যে তাড়াশ উপজেলায় প্রায় ১৪ হাজার ৯৪০ বিঘা জমি কৃষি আবাদ থেকে বাইরে চলে গেছে। এই পুকুর খনন, কৃষি জমির উপর চাপ সৃষ্টি করে কৃষককে আরও সংকটে ফেলেছে। জলাবদ্ধতার কারণে সেচ সুবিধা না পাওয়া এবং জমি সেচের জন্য অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তরও নিচে নামছে। এর ফলে কৃষকদের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, যা তাদের আয়ের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাড়াশে অবৈধ পুকুর খনন
আইনের অব্যবহৃত প্রয়োগ ও কৃষক প্রতিবাদ
অবৈধ পুকুর খনন বন্ধ করার জন্য প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে, কৃষকরা অভিযোগ করেছেন যে আইন প্রয়োগ যথাযথভাবে হচ্ছে না এবং পুকুর খননের কাজ রাত্রির অন্ধকারে অব্যাহত রয়েছে। কৃষকরা যখন ভেকু মেশিন পুড়িয়ে দিয়েছেন, তখন প্রশাসন চেষ্টার ত্রুটি করেনি, তবে এর ফলস্বরূপ একমাত্র স্থানীয় সচেতনতার উপর নির্ভর করা হয়েছে। কৃষকদের জন্য আইনি সহায়তা এবং তাদের অধিকার রক্ষায় কার্যকরী উদ্যোগ প্রয়োজন।
পরিবেশের উপর প্রভাব
এই অবৈধ পুকুর খননের ফলে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বিশেষত, পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠছে। খাল, বিল এবং নদী-নালা শুকিয়ে যাচ্ছে, যা স্থানীয় জলবায়ু ভারসাম্যকেও অস্থির করছে। এমনকি এই কার্যক্রম কৃষি জমির স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ও সেচ ব্যবস্থার ওপরও আঘাত হানছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটের জন্ম দিতে পারে।
স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজন
এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান পেতে হলে, অবিলম্বে স্থানীয় প্রশাসনকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব হলো কৃষকদের জমি রক্ষায় যথাযথ আইন প্রয়োগ করা এবং অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি, কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশবান্ধব সমাধান বের করা প্রয়োজন, যাতে আগামীদিনে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয়ে কৃষির স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়।
শেষ কথা
তাড়াশে অবৈধ পুকুর খননের ফলে কৃষকদের জন্য জীবনযাত্রার কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে এবং পরিবেশের উপর গভীর প্রভাব পড়ছে। তাই, প্রশাসনের দায়িত্ব হলো দ্রুত এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জীবনযাত্রার উন্নতি সাধন করা। পরিবেশ এবং কৃষি রক্ষা করার জন্য আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে আপনার কী মতামত?
আপনি কী মনে করেন, প্রশাসন কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে? এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আপনার কী পরামর্শ রয়েছে? মন্তব্যের মাধ্যমে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।
#তাড়াশ #ফসলিজমি #পুকুরখনন #পরিবেশ #জলাবদ্ধতা #কৃষি #জলবায়ু #পরিবর্তন