25.2 C
Bangladesh
বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫
spot_img

তিস্তা নদী বাঁচাতে জাগো বাহে: ১০ হাজার মানুষের পদযাত্রা

প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি ঠেকাতে এবং তিস্তা নদী রক্ষার লক্ষ্যে সম্প্রতি লালমনিরহাট শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি বিশাল পদযাত্রা। “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই” স্লোগানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণ, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই পদযাত্রাটি নদী রক্ষা আন্দোলনের একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে, যেখানে স্থানীয় জনগণ, পরিবেশবিদ ও রাজনৈতিক নেতারা একত্রিত হয়ে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবি জানিয়েছেন। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন

তিস্তা নদীর বিপন্ন অবস্থা

তিস্তা নদী, যেটি একসময় রংপুর অঞ্চলের মানুষের জীবনরেখা ছিল, বর্তমানে তার অবস্থান সঙ্কটে। ভারতের বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীটি আজ শুকিয়ে গিয়ে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে বিনা নোটিশে পানি ছাড়ানোর কারণে তিস্তা নদীর তীরে বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ি এবং ফসলের মাঠে বন্যা হয়ে যায়। অন্যদিকে, খরার মৌসুমে পানি প্রবাহের অভাবে নদীটি প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে, ফলে তিস্তা অঞ্চলের কৃষি চাষাবাদও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তিস্তা নদী এখন স্থানীয় জনগণের জন্য একটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

দাবির মূল কথা: তিস্তা নদী রক্ষা এবং পানির ন্যায্য হিস্যা

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন, যা রাজনৈতিক স্থবিরতার কারণে দীর্ঘদিন স্থগিত ছিল, এখন আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব (দুলু) বলেন, “তিস্তা নদী আন্তর্জাতিক নদী, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই নদী অববাহিকার মানুষ তাদের পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।” তিস্তা মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন দীর্ঘসূত্রিতার কারণে স্থানীয় জনগণের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। তাই তারা দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে তিস্তা মেগা প্রকল্প চালু করে নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন

পদযাত্রার উদ্দেশ্য এবং প্রতিবাদের শক্তি

পদযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল, তিস্তা নদী রক্ষার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করা এবং সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করা। “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই” স্লোগান শুধু একটি আন্দোলনের শুরুর প্রতীক ছিল না, বরং এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, যেখানে জনগণ নিজেদের অধিকার ও পরিবেশ রক্ষার জন্য একত্রিত হয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

পরিবেশের ওপর প্রভাব

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন শুধু একটি রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলন নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত আন্দোলনও বটে। তিস্তা নদীর পানির অভাব, নদী ভরাট এবং খরার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার কৃষি এবং জীববৈচিত্র্য। প্রতিবছর অস্বাভাবিক পানি প্রবাহের কারণে নদী এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, যা পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনছে। এসব সমস্যা পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে মিলে গিয়ে বৃহত্তর সংকট তৈরি করতে পারে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং একত্রীকরণ

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তারা দুইদিনের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই কর্মসূচি তিস্তা নদী রক্ষায় বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে পরিচালিত হবে। এটি শুধুমাত্র একটি স্থানীয় আন্দোলন নয়, বরং এটি দেশের সকল পরিবেশপ্রেমী মানুষের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শেষ কথা

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন শুধুমাত্র একটি অঞ্চলের সমস্যা নয়, এটি বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় জনগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং পরিবেশবিদরা একত্রিত হয়ে যদি এই আন্দোলনকে সমর্থন না করেন, তবে ভবিষ্যতে তিস্তা অঞ্চলের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য আরও বিপর্যস্ত হতে পারে।

এখনই আপনার মতামত জানান! তিস্তা নদী রক্ষায় আপনি কী পদক্ষেপ নিতে চান?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ