28.9 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, জুলাই ১০, ২০২৫
spot_img

গফরগাঁওয়ে ১৫টি অবৈধ ইটভাটা: পরিবেশ বিপর্যয়ের নতুন সংকট

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়ন এক আশ্চর্য পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়েছে। এখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১৫টি ইটভাটা, যার মধ্যে কিছু ভাটা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই চালু করা হয়েছে। এই অবৈধ ইটভাটাগুলোর কারণে একদিকে যেমন পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি এলাকার জনস্বাস্থ্যও বিপন্ন হচ্ছে। আইনি অনুমোদন ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনা করা এই ইটভাটাগুলোর কারণে এখানকার ফসলি জমি, গাছপালা, এবং আবাদি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একে কেন্দ্র করে, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এক নতুন সংকট সৃষ্টি করছে। অবৈধ ইটভাটা

ইটভাটাগুলোর অবৈধ কার্যক্রম

গফরগাঁও উপজেলায় মোট ২৭টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি শুধুমাত্র নিগুয়ারী ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলমান এসব ইটভাটা সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চলছে। সেগুলোর বেশিরভাগেই ড্রাম চিমনি ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মাধ্যমে কালো ধোঁয়া বের হয়। এতে শুধু পরিবেশ দূষণ হয় না, বরং স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যও আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষত, কাঠ পোড়ানোর কারণে বড় পরিমাণে CO2 নিঃসরণ হচ্ছে, যা গ্রীনহাউস গ্যাস হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে।

অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে শহরের কাছাকাছি

এছাড়া, এসব ইটভাটা শহরের বাজার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। প্রায় ৫০ থেকে ৫০০ গজের মধ্যে ইটভাটাগুলো স্থাপন করা হয়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে। এই ভাটাগুলোর কারণে গাছপালা ক্রমেই ধ্বংস হচ্ছে, মাটি ভারী হয়ে যাচ্ছে এবং ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অবৈধ ইটভাটা

এমএমবি ইটভাটা: কেমন চলছে?

মঙ্গলবারের ঘটনা অনুযায়ী, এমএমবি নামক একটি ইটভাটায় ২০০ গাছ কেটে তা স্থাপন করা হয়, যা স্থানীয়দের জন্য একটি বড় ক্ষতির কারণ। ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে এই ভাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিবাদ উঠলেও প্রশাসন তাদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইটভাটা মালিকেরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিজেদের ইচ্ছামতো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে তারা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করছে এবং সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা চালাচ্ছে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পরিবেশের ক্ষতি

ইটভাটাগুলোর কারণে তামাক, কাঠ এবং খারাপ মানের কয়লা পোড়ানোর ফলে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হচ্ছে। ফলে, এখানে বাস করা মানুষদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের মতে, ইটভাটাগুলোর কারণে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, মাছের উৎপাদনও পড়েছে এবং গাছপালা মরে যাচ্ছে। এছাড়া, আগের মতো ফলও আর আসে না। এর ফলে, এলাকার সাধারণ মানুষকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে।

নির্ভরশীল প্রশাসন: কি কি সমস্যা?

এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রশাসনের অবজ্ঞা এবং অসংবেদনশীলতা। স্থানীয় প্রশাসন এবং কিছু কর্মকর্তারা এভাবে অবৈধ কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে। অভিযোগ রয়েছে যে, ইটভাটা মালিকরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে অবৈধভাবে টাকা আদায় করছেন। প্রশাসনও কিছু অবৈধ অর্থের বিনিময়ে তাদের কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিয়ে থাকেন। সুতরাং, জনগণ এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রম মেনে নেয়া হচ্ছে।

সমাধান কী?

প্রথমত, এই ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনকে একত্রিতভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। ইটভাটাগুলোর জন্য পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করা উচিত। ফসলি জমি এবং বনাঞ্চলকে রক্ষা করতে স্থানীয় জনগণের সাথে কাজ করতে হবে। যে সকল কর্মকর্তারা এসব কার্যক্রমকে ম্যানেজ করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

শেষ কথা

গফরগাঁওয়ের নিগুয়ারী ইউনিয়নে ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম একটি বড় পরিবেশগত সংকট তৈরি করেছে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছ থেকে এক্ষুনি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই পরিবেশ ও স্থানীয় জনগণের জন্য এর সমাধান জরুরি।

Call to Action: আপনার এলাকাতেও কি অবৈধ ইটভাটা চলছে? এই বিষয়ে আপনি কী পদক্ষেপ নিতে চান? মন্তব্যে জানান এবং প্রতিবাদ করুন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ