26.4 C
Bangladesh
শুক্রবার, জুলাই ১১, ২০২৫
spot_img

আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে অবৈধ ইটভাটা এখনও চলছে

পরিবেশের জন্য একটি বাড়তি উদ্বেগ

বাংলাদেশে অবৈধ ইটভাটার ক্ষতিকারক প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। আদালতের নির্দেশনা এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ সত্ত্বেও, এক বড় অংশ অবৈধ ইটভাটাগুলি চলতে থাকছে, যা পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আদালতে ১৬০টি ইটভাটার বন্ধের তালিকা জমা দেয়। কিন্তু, তদন্তে দেখা যায় যে এর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ইটভাটা এখনও চালু রয়েছে, যা পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী।

আদালতের আদেশ: অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে নির্দেশনা

এই সমস্যা প্রথম সামনে আসে ২০২২ সালে, যখন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) একটি পিটিশনের পর, হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেয়। আদালত নির্দেশ দেয় অবৈধ ইটভাটাগুলি অবিলম্বে বন্ধ করতে এবং কর্তৃপক্ষকে পরিবেশ রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে হাইকোর্ট একটি পরিপূরক আদেশ দেয়, যার মাধ্যমে বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয় অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম স্থগিত করতে এবং এর ওপর পদক্ষেপ নিতে। এর পর, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আদালতে একটি তালিকা জমা দেয় যেখানে ১৬০টি ইটভাটার বন্ধের কথা উল্লেখ ছিল।

বাস্তবতা: এক-তৃতীয়াংশ ইটভাটা এখনও চলছে

তবে, তদন্তে দেখা গেছে যে তালিকায় থাকা ১৬০টি ইটভাটার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ এখনও সক্রিয়। উদাহরণস্বরূপ, লোহাগাড়া উপজেলায় ২৮টি ইটভাটা বন্ধ হওয়ার কথা বলা হলেও, বেশ কিছু ইটভাটা পুনরায় চিমনি বসিয়ে চালু হয়ে গেছে। এছাড়া, রাউজান, হাটহাজারী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, ফটিকছড়ি, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া এবং বোয়ালখালী উপজেলায় বহু ইটভাটার বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও, বাস্তবে বেশ কিছু ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে।

এটি শুধু আইনি বিষয় নয়, পরিবেশের জন্যও একটি বড় উদ্বেগ। ইটভাটা পরিবেশে প্রচুর দূষণ ছড়ায়। অবৈধ ভাটাগুলি পরিবেশগত বিধিমালা লঙ্ঘন করে, যা এর চেয়েও বেশি ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে।

অবৈধ ইটভাটার পরিবেশগত ও জলবায়ু সংক্রান্ত পরিণতি

ইটভাটা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অবৈধ ইটভাটাগুলি বিশেষ করে আরও বেশি বিপজ্জনক, কারণ এগুলি পরিবেশগত আইনকে উপেক্ষা করে চলে। ইট তৈরির প্রক্রিয়ায় কয়লা ও অন্যান্য জ্বালানি পোড়ানো হয়, যার ফলে বিষাক্ত গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড নিঃসৃত হয়। এসব গ্যাস পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে এবং পরিবেশকে দূষিত করে।

এছাড়া, এসব ইটভাটা মাটি ও পানির উৎসকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। পোড়ানো কয়লা ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ নদী ও খালগুলোতে প্রবাহিত হয়ে জলদূষণ ঘটায়, যা জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের পানির উৎসের জন্য বিপজ্জনক।

স্থানীয় প্রশাসনের সংগ্রাম ও শক্তিশালী বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা

যদিও স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবুও কার্যকর বাস্তবায়নে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান জানাচ্ছেন যে, তালিকায় থাকা ইটভাটাগুলি কতটা সত্যিই বন্ধ হয়েছে, তা যাচাই করতে হবে। তবে, বাস্তবে অনেক ইটভাটা পুনরায় চালু হয়ে গেছে।

প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মতে, কিছু ইটভাটার নাম পুনরায় তালিকায় এসেছে, আবার কিছু আবার চালু হয়েছে। এতে পরিবেশ এবং প্রতিবেশের ক্ষতি অব্যাহত থাকছে, যা সুস্পষ্ট সংকেত দেয় যে, শক্তিশালী আইন প্রয়োগ এবং কার্যকর নজরদারি প্রয়োজন।

দীর্ঘমেয়াদী সমাধান: একটি কার্যকরী পদক্ষেপ

অবৈধ ইটভাটার সমস্যা সমাধানে শুধুমাত্র আইনগত ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। একটি দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই সমাধানের জন্য সরকারকে নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে, যেমন ফ্লাই অ্যাশ ব্রিকস বা কম্প্রেসড আর্থ ব্লক ব্যবহার। এইসব বিকল্প পদ্ধতি পরিবেশের ওপর কম প্রভাব ফেলবে।

এছাড়া, ইটভাটা শিল্পে সবুজ শক্তির ব্যবহার, যেমন সোলার পাওয়ারড কিলন বা বায়োগ্যাস পদ্ধতির মতো টেকসই সমাধানগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এসব উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য আরও পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যত তৈরি করতে সহায়ক হবে।

উপসংহার: আমাদের দায়িত্বের সময়

বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার কাজটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি আইন, সরকারি উদ্যোগ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে হবে। আমাদের প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ক্যাল টু অ্যাকশন (CTA): আপনি যদি পরিবেশ সংক্রান্ত এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আরও জানতে চান, তবে এই পোস্টটি শেয়ার করুন এবং মন্তব্যে আপনার মতামত জানান। আসুন, আমরা সবাই মিলে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ