অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান
বাংলাদেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম বড় হুমকি হলো অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুমোদনহীনভাবে পরিচালিত হয়, যেখানে পরিবেশগত কোনো নিয়ম মানা হয় না। সম্প্রতি সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তিনটি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আ. লীগ নেতার তিনটি অবৈধ ইটভাটা
এই অভিযান পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট এলাকায়, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ইট উৎপাদন করা হচ্ছিল। অভিযানে দেখা গেছে, ইটভাটাগুলো কোনো পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছিল এবং নিষিদ্ধ জ্বালানি ব্যবহার করে বায়ুদূষণ ছড়াচ্ছিল। প্রশাসনের তৎপরতায় এসব অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।
পরিবেশের জন্য অবৈধ ইটভাটার ক্ষতিকর প্রভাব
অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিবেশের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব ইটভাটায় সাধারণত নিম্নমানের কয়লা ও কাঠ ব্যবহার করা হয়, যা থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। ফলে আশেপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ চরম আকার ধারণ করে, যা মানুষের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। আ. লীগ নেতার তিনটি অবৈধ ইটভাটা
এছাড়া এসব ইটভাটা কৃষিজমির উর্বর মাটি কেটে নেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে কৃষি উৎপাদনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি কাটার ফলে ভূমিক্ষয় হয়, যা স্থানীয় জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট করে। অনেক সময় সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেও কাঠ সংগ্রহ করে ইট পোড়ানোর কাজ চালানো হয়, যা বন উজাড়ের অন্যতম কারণ।
আইন ও প্রশাসনের উদ্যোগ
বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কোনো ইটভাটা স্থাপন করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। তাছাড়া, জনবসতিপূর্ণ এলাকা, কৃষিজমি বা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে ইটভাটা স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে বাস্তবে দেখা যায়, অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি নিয়ম লঙ্ঘন করেও ইটভাটা পরিচালনা করেন।
সাম্প্রতিক অভিযানে শুধু ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়নি, পাশাপাশি অবৈধ ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন অভিযান আরও জোরদার করা হবে, যাতে পরিবেশের ক্ষতি রোধ করা যায়।
পরিবেশবান্ধব সমাধানের প্রয়োজনীয়তা
ইট উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করা গেলে এই সংকট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমানে অনেক দেশেই ইট তৈরির ক্ষেত্রে অটোমেটেড ব্রিক কিলন বা পরিবেশবান্ধব অটো ব্রিকস ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তুলনামূলকভাবে কম কার্বন নিঃসরণ করে। বাংলাদেশেও এই প্রযুক্তির প্রসার ঘটানো গেলে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা কমবে এবং পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে।
এছাড়া ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহার করা যেতে পারে, যা একদিকে নির্মাণ খরচ কমায় এবং অন্যদিকে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাবও ফেলে না। সরকার যদি পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়, তবে ভবিষ্যতে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতার প্রয়োজন
শুধু প্রশাসনের অভিযানই যথেষ্ট নয়, সাধারণ মানুষকেও পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হতে হবে। অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে এবং প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণ খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করা গেলে দীর্ঘমেয়াদে এই সংকটের সমাধান করা সম্ভব হবে।
পরিবেশ রক্ষার এই লড়াইয়ে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণ একসঙ্গে কাজ করলে তবেই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে আমাদের সবার দায়িত্ব পরিবেশকে বাঁচানো। আপনি কীভাবে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারেন? কমেন্টে আপনার মতামত জানান!