বাংলাদেশের নদী পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নদী সুরক্ষায় এডিবি এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সহায়তা অপরিহার্য। তিনি বলেন, শুধু একেকটি নদী নয়, বরং নদীর সংযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা জরুরি, যাতে দূষিত নদীগুলোও সুপেয় পানির উৎসে পরিণত হতে পারে। পরিবেশ উপদেষ্টার আহ্বান
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার পানি ভবনে অনুষ্ঠিত “নদী পুনরুদ্ধার: বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা” শীর্ষক জ্ঞান বিনিময় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। নদী পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা প্রয়োজন।
নদী পুনরুদ্ধারে সংকট ও সমাধান
বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার ক্রমাবনতি, বিশেষত বুড়িগঙ্গা নদীর ক্রোমিয়াম দূষণ, একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মনে করেন, নদী সুরক্ষার জন্য সরকারের যে সকল উদ্যোগ রয়েছে, সেগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, পানির গুণগত মান ঠিক রাখতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা কাজে লাগানো প্রয়োজন।
নদী সুরক্ষায় কাজ করবে এডিবি
এডিবি সহায়তায় একটি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করার পরিকল্পনাও ঘোষিত হয়েছে। নদী-নির্ভর জনগণকে পুনরুদ্ধারের কার্যক্রমে যুক্ত করা এবং তাদের সচেতন করা জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন। নদী পুনরুদ্ধারের জন্য গঠন করা হবে একটি কর্মপরিষদ, যা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে কাজ করবে। পরিবেশ উপদেষ্টার আহ্বান
প্লাস্টিক দূষণ: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে
একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ হল নদীর প্লাস্টিক দূষণ। প্রচলিত ড্রেজার দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সরানো সম্ভব নয়, এজন্য বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে। এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা। তিনি আশা করেন, সঠিক উদ্যোগ এবং সম্পদ সংস্থাপনের মাধ্যমে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে নদী পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।
দীর্ঘমেয়াদি সমাধান: একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি
রিজওয়ানা হাসান সেমিনারে আরও বলেন, প্রকল্পভিত্তিক নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন ধারাবাহিক নদী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এটি সরকারের জলবায়ু প্রকল্প এবং নদী সুরক্ষার সমন্বিত একটি উদ্যোগ হিসেবে কাজ করবে।
আহ্বান: আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
পরিবেশ উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, নদী পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার জন্যই নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য নদী ব্যবস্থার জন্যও মডেল হতে পারে।
তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের নদীগুলোর পুনরুদ্ধার সফল হবে।
সামগ্রিক মূল্যায়ন
এডিবির সহায়তা এবং স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোগের মাধ্যমে যদি নদী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থা এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাবে। এটা শুধুমাত্র দেশের পরিবেশ, জলবায়ু এবং সামাজিক কাঠামোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মডেলও হতে পারে।