পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থাপনা। ঢাকা শহরের মতো ব্যস্ত নগরীতে এই সমস্যাটি আরও প্রকট। এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) বন্ধ থাকার কারণে ময়লার কন্টেইনারগুলো রাস্তায় পড়ে থাকে, যা শুধু দুর্গন্ধই সৃষ্টি করে না, বরং বায়ুদূষণের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। এই সমস্যা কতটা ভয়াবহ হতে পারে এবং এটি কীভাবে আমাদের জলবায়ু ও পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে এই লেখায় আলোচনা করা হবে। বায়ুদূষণের নীরব ঘাতক
বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা
এসটিএস বন্ধ থাকায় রাস্তার পাশে ময়লার স্তূপ জমে থাকে। পথচারীরা এর পাশ দিয়ে হাঁটার সময় নাক-মুখ চেপে ধরে হাঁটেন, যা প্রমাণ করে এই দূষণের মাত্রা কতটা গুরুতর।
রাজধানীর বাসিন্দারা এমনিতেই বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচতে বাধ্য হন। ঢাকার বাতাসের মান (AQI) প্রায়শই অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে থাকে। বর্জ্যের দুর্গন্ধ যোগ হলে এটি আরও বিপর্যস্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
একটি বাস্তব উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। আমি একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাসা-বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা ময়লা রাস্তায় রাখা কন্টেইনারে ফেলছেন, কিন্তু সেখান থেকে তা সরানোর পরবর্তী ধাপটি বন্ধ থাকায় দুর্গন্ধ এবং বায়ুদূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। এর পাশেই রয়েছে একটি হাসপাতাল, একটি শিশুদের স্কুল ও খেলার মাঠ। শিশুরা এবং পথচারীরা এই অবস্থার শিকার হচ্ছেন। বায়ুদূষণের নীরব ঘাতক
শহরের বিভিন্ন জায়গায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকট
ইন্দিরা রোড থেকে সংসদ ভবনের দিকে গেলে দেখা যায়, ন্যাম ভিলেজের সামনে অনেক সময় খোলা জায়গায় বাসা-বাড়ির বর্জ্য পড়ে থাকে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মতে, এসটিএস মেরামতের কারণে তারা বাধ্য হয়ে ময়লা রাস্তায় রাখছেন। তবে কিছু এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনাহীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বললেন, “ঐইডা বড়লোকের এরিয়া, ওনারাই ভালো জানে।” এটি স্পষ্ট করে যে, পরিকল্পনার অভাব এবং অব্যবস্থাপনা এই দূষণের অন্যতম কারণ।
বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি
NASA-এর তথ্য অনুসারে, AQI এর মান ৫০ বা তার নিচে থাকলে তা ভাল মানের বাতাস হিসেবে বিবেচিত হয়। AQI যদি ৫১ থেকে ১০০ হয় তবে তা মধ্যম মানের এবং ১০১ থেকে ১৫০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর।
গেল বছরে ঢাকার গড় AQI ছিল ১০০-এর বেশি, অর্থাৎ ঢাকায় বাতাসের মান কখনো স্বাস্থ্যকর ছিল না। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থাপনা এই দূষণের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস শুধু অস্বস্তিই সৃষ্টি করে না, এটি শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, এবং অন্যান্য ফুসফুসজনিত রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পরিবেশের উপর প্রভাব
বর্জ্য অব্যবস্থাপনার ফলে শুধুমাত্র বায়ুদূষণই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পচনশীল বর্জ্য থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হয়, যা গ্রিনহাউস ইফেক্ট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এছাড়া, প্লাস্টিক ও অন্যান্য অজৈব বর্জ্য যখন খোলা জায়গায় পোড়ানো হয়, তখন তা বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন করে, যা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
সমস্যা সমাধানের উপায়
- সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: স্থানীয় সরকারকে বর্জ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
- পুনর্ব্যবহার ও কম্পোস্টিং: বাসাবাড়ি ও শিল্প কারখানাগুলোর বর্জ্য আলাদা করে পুনর্ব্যবহার ও কম্পোস্টিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
- সচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যেন তারা রাস্তার পাশে বা খোলা জায়গায় ময়লা না ফেলেন।
- আইন প্রয়োগ: যারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়ম ভঙ্গ করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শেষ কথা
বর্জ্য অব্যবস্থাপনা শুধু একটি শহুরে সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক পরিবেশ ও জলবায়ুর উপর প্রভাব ফেলছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে আমাদের স্বাস্থ্য এবং প্রকৃতি আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের।
আপনার মতামত দিন! আপনি কি মনে করেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থাপনা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ? আপনার মতামত নিচে কমেন্টে জানান। এছাড়া, পরিবেশ সংক্রান্ত আরও তথ্য পেতে আমাদের পেজ সাবস্ক্রাইব করুন।