ঢাকার রাস্তায় বের হলেই একটা শব্দের দেয়ালে আটকে যেতে হয়—হর্ন, মাইকের আওয়াজ, নির্মাণকাজের কোলাহল। দিনের পর দিন এই শব্দ আমাদের শরীরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে, অথচ আমরা সেটাকে প্রায় স্বাভাবিক ধরে নিয়েছি। শব্দদূষণের মাত্রা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আবাসিক এলাকায় শব্দের নিরাপদ মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল, কিন্তু ঢাকার ব্যস্ত এলাকায় এই মাত্রা নিয়মিতই ৮৫ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শব্দদূষণ নিয়ে আইন আছে, শাস্তির ব্যবস্থাও আছে, কিন্তু বাস্তবে খুব বেশি পরিবর্তন কি আমরা দেখতে পাচ্ছি?
শব্দদূষণের বাস্তবতা: কোথাও যেন শান্তি নেই
গ্লোবাল সিটিস ইনস্টিটিউশনের গবেষণা বলছে, ঢাকায় শব্দদূষণের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে প্রতি চারজনের একজনের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। ২০৪৫ সালের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ঠিকমতো শুনতে পারবে না—এটাই ভবিষ্যতের হিসাব।
এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে কোথা থেকে?
- অপ্রয়োজনীয় হর্ন: রাস্তায় বেরোলেই কান ঝাঁঝরা হয়ে যায়। বিশেষ করে মোটরবাইক ও অ্যাম্বুলেন্সের উচ্চশব্দের হর্ন সহ্য করা মুশকিল।
- ট্রাফিক জ্যাম ও বিশৃঙ্খলা: যেখানে-সেখানে গাড়ি থামানো, ওভারটেকিং, রাস্তা দখল করে পার্কিং—এসবই হর্ন বাজানোর প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
- সামাজিক অনুষ্ঠান ও মাইকের শব্দ: গভীর রাত পর্যন্ত চলা অনুষ্ঠান, বাসার ছাদে উচ্চশব্দে গান বাজানো যেন এখন ট্রেন্ড হয়ে গেছে।
আইন আছে, কিন্তু ফলাফল কোথায়?
শব্দদূষণ রোধে আইন অনেক আগেই হয়েছে, শাস্তির বিধানও আছে। কিন্তু শহরের বাস্তব চিত্র কী বলছে? রাতভর মাইকের শব্দ, রাস্তায় থেমে থেমে হর্ন, অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের অপব্যবহার—সবকিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। শব্দদূষণের মাত্রা
অভিযোগ করা হলে কখনো কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়, কিন্তু তাতেও খুব বেশি পরিবর্তন আসে না। শব্দ বন্ধ হয় কয়েক ঘণ্টার জন্য, তারপর আবার আগের মতোই চলতে থাকে।
যারা শব্দদূষণের শিকার, তারা দিনের পর দিন কানের ক্ষতি, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ সহ্য করে যাচ্ছে। অথচ যারা শব্দ তৈরি করছে, তাদের অনেকেই হয়তো বুঝতেও পারছে না যে তারা কত বড় ক্ষতি করছে।
কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, প্রচারণাও চলছে, কিন্তু বাস্তবে এর প্রভাব কতটুকু? আইন যদি বাস্তবে কার্যকর না হয়, তাহলে সেটার অস্তিত্ব থাকার মানেই বা কী?
শব্দদূষণ বন্ধ করতে কী করা যায়?
- আইনের কঠোর প্রয়োগ: নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে, জরিমানা ও শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
- সচেতনতা বাড়ানো: শব্দদূষণের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি নিয়ে প্রচারণা চালাতে হবে।
- প্রযুক্তির ব্যবহার: ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে উন্নত প্রযুক্তি ও শব্দনিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা দরকার।
- নাগরিক উদ্যোগ: আশপাশে কেউ নিয়ম ভাঙলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
শেষ কথা
শব্দদূষণ আমাদের সবার ক্ষতি করছে, কিন্তু আমরা হয়তো সেটা বুঝতে পারছি না বা বুঝেও কিছু করছি না। প্রশাসনের কঠোর অবস্থান, আইনের প্রয়োগ, আর আমাদের ব্যক্তিগত সচেতনতা ছাড়া এই সমস্যা কখনোই সমাধান হবে না।
আপনার এলাকায় শব্দদূষণ কতটা সমস্যা তৈরি করছে? আপনি এর সমাধানে কী করতে চান? কমেন্টে জানান।