পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বন অধিদপ্তর বিশেষ ধরনের গাছ ও বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় তারা দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং গুরুত্বপূর্ণ গাছ, স্মারক বৃক্ষ, পবিত্র বৃক্ষ, প্রাচীন বৃক্ষ এবং কুঞ্জবন চিহ্নিত করতে আবেদন আহ্বান করেছে। এতে গাছ ও বন সংরক্ষণের জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া যাবে এবং দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়ন সাধিত হবে। বন অধিদপ্তরের নতুন উদ্যোগ
গাছ ও বন সংরক্ষণে নতুন উদ্যোগ
প্রাচীন গাছ, কুঞ্জবন, স্মারক বৃক্ষ এবং পবিত্র বৃক্ষ সংরক্ষণের জন্য বন অধিদপ্তর আবেদন আহ্বান করেছে। এই আবেদন প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ধারা ২৩ (১)-এর অধীনে। এর উদ্দেশ্য হলো প্রাকৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক বায়োডাইভারসিটির গুরুত্ব তুলে ধরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গাছ, বন ও প্রকৃতি সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এসব বৃক্ষের অবস্থান, বয়েস, এবং তাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা।
আবেদন প্রক্রিয়া এবং তথ্য পাঠানোর নিয়মাবলী
বন অধিদপ্তর তাদের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আবেদন করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগ্রহী ব্যক্তিদের ৩০ মার্চের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ আবেদন পাঠাতে হবে। আবেদন করার জন্য ইমেইল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে: cf-wildlife@bforest.gov.bd, এবং ডাকযোগে আবেদন পাঠানোর ঠিকানা হলো প্রধান বন সংরক্ষক, বন অধিদপ্তর, বন ভবন, আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭।
এছাড়া, বন অধিদপ্তর তাদের নিয়মাবলী অনুযায়ী কিছু তথ্য আহ্বান করেছে, যার মধ্যে গাছ বা কুঞ্জবনের নাম, অবস্থান, বয়স, সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, গাছটির মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য, এবং সংরক্ষণের জন্য যে সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হবে তা উল্লেখ করার জন্য বলা হয়েছে।
বিশেষ গাছের প্রকারভেদ
বন অধিদপ্তর বিশেষভাবে কিছু ধরনের গাছ এবং বন চিহ্নিত করতে চায়। যেমন, ‘স্মারক বৃক্ষ’ হলো এমন গাছ যেগুলোর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত গুরুত্ব রয়েছে। আবার ‘পবিত্র বৃক্ষ’ এমন গাছ যা ধর্মীয় বা গোত্রীয় গুরুত্ব ধারণ করে। ‘কুঞ্জবন’ হলো এমন এক স্থান যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি এবং লতাগুল্মের সমাহার রয়েছে, যা জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এবং স্থানীয় জনগণের কাছে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক গুরুত্ব রাখে। বন অধিদপ্তরের নতুন উদ্যোগ
সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
এ ধরনের গাছ এবং বন সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এরা জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ এবং মানবসাধারণের স্বার্থে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রাচীন গাছ এবং কুঞ্জবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের বাসস্থান রয়েছে, যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। এটি শুধু পরিবেশ রক্ষাই নয়, দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
গাছ ও বন সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ
সরকার ৫০ বছর বা তার চেয়ে বয়সী গাছের তালিকা তৈরি করতে যাচ্ছে, যা দেশের পরিবেশ এবং গাছের সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই তালিকা তৈরির মাধ্যমে গাছ এবং বন সংরক্ষণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মও উপকৃত হতে পারে।
এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
পরিবেশের বর্তমান অবস্থা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছে। একদিকে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে শহরাঞ্চলে গাছের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে গাছ ও বন সংরক্ষণের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। প্রাচীন গাছ এবং কুঞ্জবন যদি সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়, তা পরিবেশের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে এবং স্থানীয় জনগণের জন্য এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ হয়ে উঠবে।
আপনি কি আপনার প্রিয় গাছ বা বন সংরক্ষণ করতে চান?
আপনি যদি বাংলাদেশের কোথাও একটি প্রাচীন গাছ বা কুঞ্জবন চিহ্নিত করতে চান, তাহলে এখনই আবেদন করুন। আপনার মাধ্যমে সংরক্ষিত হবে এই ঐতিহ্য এবং এক নতুন পদক্ষেপের শুরু হতে পারে। দয়া করে আবেদন পত্রের সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূর্ণ করুন এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আপনার অবদান রাখুন।