33.4 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
spot_img

পান্থকুঞ্জ পার্কে কাটা গাছের গুঁড়ি দিয়ে শহীদ মিনার

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পান্থকুঞ্জ পার্কের কাটা গাছের গুঁড়ি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে একটি শহীদ মিনার। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং একইসঙ্গে পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিতে এই উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন। এটি শুধু একটি প্রতীকী শহীদ মিনার নয়, বরং একটি প্রতিবাদ এবং পরিবেশ সচেতনতার প্রতিফলন।

পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

পান্থকুঞ্জ পার্কের গাছ কাটার পেছনে মূল কারণ হলো এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। এই প্রকল্পের সংযোগ সড়কের জন্য হাতিরঝিল জলাধার এবং পান্থকুঞ্জ পার্কের বড় অংশ ধ্বংস করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪৫ প্রজাতির ২ হাজারেরও বেশি গাছ কাটা হয়েছে, যা পরিবেশবিদদের এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান জানান, তাঁদের আন্দোলন ৭০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলছে। শহরের এই সবুজ জায়গা রক্ষার জন্য তাঁরা অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শহীদ মিনার তৈরির মাধ্যমে তাঁরা শুধু ভাষা আন্দোলনের বীরদের সম্মান জানাননি, বরং প্রকৃতির প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধকেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

কাটা গাছের গুঁড়ি থেকে শহীদ মিনার

২১ ফেব্রুয়ারি সাধারণত সবাই শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাঁদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে অন্য কোথাও যেতে পারেননি। তাই তাঁদের মনে হয়, কাটা গাছের গুঁড়ি দিয়েই তৈরি করা যেতে পারে একটি শহীদ মিনার।

পার্কে কাটা গাছের অবশিষ্ট অংশ থেকে কিছু গুঁড়ি একত্র করে তৈরি করা হয় শহীদ মিনারের কাঠামো। পার্কে এখনো টিকে থাকা বুনো ফুল সংগ্রহ করে এর ওপর রাখা হয়, যা এক অনন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি হয়ে ওঠে। পরে আশপাশের শিশুরা এসে এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানায়, ফুল দিয়ে সাজায়। এই ছোট উদ্যোগটি শহরের সবুজ রক্ষার আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

শহরের ফুসফুস রক্ষার লড়াই

পরিবেশবিদরা মনে করেন, ঢাকা শহরে গাছ কাটার হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সংকট সৃষ্টি করবে। পান্থকুঞ্জ পার্কে গাছ কাটার ফলে এলাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বায়ুদূষণ, জলাবদ্ধতা এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

পরিবেশবাদীরা দাবি করছেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। তাঁরা বলছেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ খোলা জায়গা এবং গাছ সংরক্ষণ না করা হলে ভবিষ্যতে ঢাকায় বসবাস করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

জনসচেতনতা ও আন্দোলনের গুরুত্ব

এই শহীদ মিনার তৈরি শুধু একটি শ্রদ্ধার নিদর্শন নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত জরুরি। জনগণ যদি সচেতন হয় এবং তাদের দাবি তুলে ধরে, তবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনায় পরিবেশগত বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে।

শেষ কথা

পান্থকুঞ্জ পার্কে গাছ কাটার প্রতিবাদে তৈরি শহীদ মিনার আমাদের শেখায় যে, আমরা শুধু অতীতের শহীদদের স্মরণ করব না, ভবিষ্যতের জন্যও দায়িত্বশীল হতে হবে। এই আন্দোলন শুধু পরিবেশ রক্ষার নয়, এটি একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য লড়াই।

আপনি কী ভাবছেন? পরিবেশ রক্ষায় আপনার কী মতামত? মন্তব্য করে আপনার মতামত জানান এবং পোস্টটি শেয়ার করে সচেতনতা বাড়ান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ