জ্বালানি খাতে রুফটপ সোলারের গুরুত্ব
বাংলাদেশের জ্বালানি খাত পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে নবায়নযোগ্য শক্তির ভূমিকা ক্রমেই বাড়ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, শিল্প খাতের রুফটপ সোলার প্রযুক্তি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি নতুন উৎস নয়, বরং এটি জ্বালানি নিরাপত্তা ও টেকসই অবকাঠামোর জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি গ্রিডের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে একটি শক্তিশালী বিকল্প হতে পারে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) আয়োজিত একটি কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালায় বক্তারা বলেন, সোলার রুফটপ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিড ট্যারিফের তুলনায় সাশ্রয়ী হওয়ায় এটি আর্থিকভাবে লাভজনক এবং একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব।
নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার: সরকারের লক্ষ্যমাত্রা
বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে ৪২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর একটি বড় অংশ আসতে পারে রুফটপ সোলার প্রযুক্তি থেকে। ইডকলের নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর মোরশেদ জানান, এই খাতে ইডকল শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কম খরচে অর্থায়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তা, মানসম্পন্ন সরঞ্জাম ক্রয় এবং দক্ষতা বৃদ্ধির কাজ করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ রুফটপ সোলার থেকে উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করতে পারে। ইডকল ২০২৬ সালের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াটপিক রুফটপ সোলার প্রকল্পে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা নবায়নযোগ্য শক্তি খাতের জন্য বড় একটি অর্জন হতে পারে।
শিল্পখাতে সোলার রুফটপের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প খাত বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্প (RMG), যেখানে বিদ্যুতের ব্যবহার অত্যন্ত বেশি। এই খাতে সোলার প্রযুক্তির ব্যবহার উৎপাদন ব্যয় কমানোর পাশাপাশি শিল্পকারখানার কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে সহায়ক হবে। এছাড়া, এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিতি বাড়াবে।
রুফটপ সোলারের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
সোলার রুফটপ প্রযুক্তি বাস্তবায়নে একাধিক সুবিধা রয়েছে।
প্রথমত, এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ সাশ্রয় করে, কারণ সোলার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিড ট্যারিফের তুলনায় অনেক কম ব্যয়ে পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, এটি গ্রিডের ওপর চাপ কমায়, ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্ভাবনা কমে। তৃতীয়ত, এটি একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, যা কার্বন নিঃসরণ কমায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হয়।
তবে, এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে উচ্চ বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, যা অনেক প্রতিষ্ঠান সহজে বহন করতে পারে না। এছাড়া, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সরকারি নীতিগত সহায়তার অভাব অনেক ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির প্রসারে বাধা সৃষ্টি করে।
ভবিষ্যতের পথচলা
বিশেষজ্ঞদের মতে, রুফটপ সোলার প্রযুক্তি কেবলমাত্র বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের জন্য নয়, বরং এটি পরিবেশবান্ধব টেকসই ভবিষ্যতের অন্যতম ভিত্তি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও রুফটপ সোলার প্রযুক্তির সম্প্রসারণ জরুরি, যাতে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়ানো যায় এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
সরকারের লক্ষ্য পূরণে রুফটপ সোলার প্রযুক্তির বিকাশ ও সঠিক নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত একটি নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাবে।
আপনার মতামত কী?
সোলার প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনার ভাবনা কী? এটি কি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারবে? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।