27 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
spot_img

সারা দেশে অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ: পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ

বাংলাদেশের ইটভাটা শিল্প নির্মাণ খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অবৈধ ইটভাটাগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। কাঠের জ্বালানি ব্যবহার, কৃষিজমি ধ্বংস, বায়ুদূষণ, এবং বন উজাড়ের কারণে দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও তীব্র হচ্ছে। তাই, অবশেষে হাইকোর্ট কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে—সারা দেশের সব অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবৈধ ইটভাটা

চার সপ্তাহের মধ্যে সব অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিতে হবে

হাইকোর্টের নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিতে হবে। সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। যদি তারা ব্যর্থ হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

বিশেষ করে সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারদের আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাবদিহি করতে হবে। আগামী ১৭ মার্চের মধ্যে তাদের সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এটি পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, প্রশ্ন থেকে যায়—এটি কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে?

অবৈধ ইটভাটাগুলো কেন এত ক্ষতিকর?

বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে, যেগুলোর বেশিরভাগেরই কোনো অনুমোদন নেই। এসব ইটভাটা সাধারণত কাঠের জ্বালানি ব্যবহার করে, যা বন উজাড়ের অন্যতম কারণ। কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির ফলে বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়, যা জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

শুধু বায়ুদূষণই নয়, ফসলি জমির মাটিও ব্যবহৃত হচ্ছে এসব ইটভাটায়, যা কৃষির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে মাটির উর্বরতা কমে যায় এবং ভবিষ্যতে চাষাবাদ কঠিন হয়ে পড়ে। অবৈধ ইটভাটা

আরেকটি বড় সমস্যা হলো শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি। বেশিরভাগ ইটভাটার শ্রমিকরা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে পারেন না। ধুলাবালি ও ধোঁয়ার কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের রোগসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।

আইন থাকা সত্ত্বেও কেন বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ইটভাটা?

পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশে আইন থাকলেও, এর বাস্তবায়ন খুব দুর্বল। ২০২২ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যেখানে দেশের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবি জানানো হয়।

সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেয়। এরপর ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর আদালত আবারও নির্দেশনা জারি করে, যাতে প্রতিটি বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারদের এসব ইটভাটা বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

কিন্তু দেখা যায়, প্রশাসনের গাফিলতির কারণে আগের বন্ধকৃত ইটভাটাগুলো আবার চালু হয়েছে। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে এগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই হাইকোর্ট এবার আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে, যেন প্রশাসন আর কোনো গাফিলতি না দেখায়।

পরিবেশবান্ধব বিকল্প কি সম্ভব?

ইটভাটা শিল্প বন্ধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু এটিকে পরিবেশবান্ধব করা জরুরি। উন্নত বিশ্বে এখন ইটের বিকল্প হিসেবে কংক্রিট ব্লক ব্যবহারের প্রচলন বাড়ছে। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন আনার প্রয়োজন রয়েছে।

এছাড়া, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ইট তৈরির ব্যবস্থা করা সম্ভব। উন্নত প্রযুক্তির ইটভাটা যেমন হাইব্রিড হফম্যান কিলন (HHK) বা ভার্টিক্যাল শ্যাফট ব্রিক কিলন (VSBK) ব্যবহার করলে পরিবেশদূষণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

সরকার যদি কঠোরভাবে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য এটি ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে।

এই নির্দেশ বাস্তবায়ন হবে তো?

এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এই আদেশ কতটা কার্যকর হবে?

বাংলাদেশে আদালতের অনেক নির্দেশ বাস্তবায়ন হয় না, বিশেষ করে যখন এটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। ইটভাটা মালিকদের অনেকেই ক্ষমতাধর, ফলে তারা আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

তবে, হাইকোর্ট যদি প্রশাসনের কার্যক্রম কঠোরভাবে তদারকি করে এবং জনগণ সচেতন হয়, তাহলে এই আদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং সরকারের প্রতি চাপ তৈরি করতে হবে, যেন অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ হয়।

আপনার মতামত কী? আপনি কি মনে করেন, হাইকোর্টের এই নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে? নিচে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ