27 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
spot_img

ঢাকার খাল উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা: জলাবদ্ধতা নিরসনের নতুন আশার আলো?

ঢাকার খালের অবস্থা: এক দশকের অবহেলা ও তার পরিণতি

ঢাকা শহর, যার বড় একটি অংশ জলাশয়, নদী এবং খালের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়, বর্তমানে সেই প্রাকৃতিক পরিবেশ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের শহরের খালগুলো একসময় বর্ষার পানি ধারণের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। কিন্তু অতি নগরায়ণ, খালের দখল এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই খালগুলো এখন প্রায় মৃত। আজকাল বর্ষার মৌসুম এলেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে, এবং তা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ককে অবরুদ্ধ করে দেয়। খালগুলোকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে রাস্তা থেকে শুরু করে বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত পানি আটকে যায়, যার ফলে শহরের নাগরিকরা চরম ভোগান্তির শিকার হয়। বিশ্বব্যাংকের সহায়তা

আমরা সবাই জানি, খাল পুনরুদ্ধার, পানি শুদ্ধীকরণ এবং শহরের সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নাগরিকদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু জলাবদ্ধতা হ্রাসের জন্য নয়, বরং শহরের দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বব্যাংক কেন এই প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে?

বিশ্বব্যাংক, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঢাকা উত্তরের খাল উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করতে যাচ্ছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, গুলশানে ডিএনসিসি নগরভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। তারা ঢাকা উত্তরের খাল খনন, খালের পানি দূষণ রোধ এবং জলাবদ্ধতা হ্রাসের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংক শুধু অর্থই দিচ্ছে না, বরং তাদের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে খালগুলো পুনরুদ্ধার করতে শুধু বড় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে না, পাশাপাশি তাদের বাস্তবায়নে সম্পূর্ণ দক্ষতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারেও সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তা

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?

বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্পে খালের খনন এবং ময়লা অপসারণে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আরও বিশেষত, খালের পানি দূষণ রোধে বিভিন্ন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  1. খাল খনন ও পরিষ্কার করা: অনেক খাল ইতোমধ্যেই আবর্জনায় ভরা, যা পানির প্রবাহ থামিয়ে দেয়। বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে এসব খাল খনন করে তার পূর্ণতা ফিরিয়ে আনা হবে।
  2. ফিক্যাল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্ট: খালের আশপাশে যে বর্জ্য জমে, সেগুলো অপসারণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
  3. অতিরিক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: ঢাকার বৃহত্তর অঞ্চলগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করে তোলা হবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা জানান, খালগুলো শুধুমাত্র খননই করা হবে না, বরং এসব খালের মধ্যে পানির প্রবাহ বজায় রেখে তার সংরক্ষণে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।

ডিএনসিসি’র ভূমিকা: এটি কতটা কার্যকর হবে?

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ইতোমধ্যে খাল পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা এই উদ্যোগকে নতুন মাত্রা দিতে যাচ্ছে। প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, “আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করেছি। বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ঢাকার জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসন করতে এবং পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে সহায়ক হবে।”

এতে, খালগুলো শুধু পানি ধারণ করতে সক্ষম হবে না, বরং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনের ফলে ঢাকার পরিবেশ আরও উন্নত হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে এই প্রকল্পের ভূমিকা

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়িত এই প্রকল্পের ফলে ঢাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে, এমনটাই আশা করা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে যেসব এলাকা পানি জমে থাকত, সেই স্থানগুলো থেকে পানি দ্রুত নিষ্কাশন সম্ভব হবে। খালগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।

এই প্রকল্প ঢাকাকে আরেকটু বসবাসযোগ্য, পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর এবং পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলবে। যেটি শুধু আমাদের আজকের জন্য নয়, আগামী প্রজন্মের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশের দিকে আরও একটি ধাপ এগিয়ে

জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। খালগুলোর পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে পারলে তা শুধু ঢাকার জন্য নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য উপকারী হবে। যেহেতু আমাদের দেশের অধিকাংশ নদী ও খাল বেসামাল হয়ে পড়েছে, সেহেতু একটি সফল প্রকল্প ঢাকার জলব্যবস্থার জন্য একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।

শেষ কথা: আমাদের অংশগ্রহণের প্রয়োজন

বিশ্বব্যাংক এবং ডিএনসিসি’র এই উদ্যোগ শুধুমাত্র সরকারি সহায়তার বিষয় নয়, এটি নাগরিকদের জন্য একটি বড় সুযোগ। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব, আমরা যেন এই উদ্যোগের অংশ হয়ে উঠি এবং সহযাত্রী হই। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন ও দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের সকলের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার মতামত জানাতে কমেন্টে লিখুন, ঢাকায় জলাবদ্ধতা কমাতে আপনার কী পদক্ষেপ প্রয়োজন মনে হয়?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ