27 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
spot_img

পাহাড় কাটা বন্ধ, কাটলে মামলা – পরিবেশ রক্ষায় নতুন নির্দেশনা

বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন, শিল্পায়ন, এবং অবৈধ বসতি স্থাপনের কারণে দেশের পাহাড়গুলোর অবস্থা দিন দিন সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে। এবার সেই ধ্বংসযজ্ঞ রুখতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কঠোর বার্তা দিয়েছেন—আর পাহাড় কাটা যাবে না, কাটলে মামলা হবে।

কেন পাহাড় কাটা বন্ধ করা জরুরি

পাহাড় শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম স্তম্ভ। পাহাড় ধ্বংস হলে মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়, ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ে, বন্যা প্রবণতা বেড়ে যায় এবং জীববৈচিত্র্যের ভয়াবহ ক্ষতি হয়। অনেক বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী পাহাড়েই বসবাস করে, যাদের অস্তিত্ব এখন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

এছাড়া পাহাড়ের গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং আমাদের জলবায়ুর স্থিতিশীলতা রক্ষা করে। একের পর এক পাহাড় কেটে ফেলার ফলে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও ত্বরান্বিত করছে।

আইন এবার কঠোর হবে

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান স্পষ্ট করে বলেছেন, এবার পাহাড় কাটার জন্য শ্রমিকদের নয়, মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। যারা প্রকৃতপক্ষে পাহাড় কেটে মুনাফা করছে, তাদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানোর সময় এসেছে।

তিনি সবাইকে অনুরোধ করেছেন, যদি কেউ পাহাড় কাটার ঘটনা দেখতে পান, তাহলে যেন দ্রুত জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। জনগণকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যেন প্রশাসন এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।

পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন কি যথেষ্ট

বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী, অবৈধভাবে পাহাড় কাটলে ২ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। অনেক সময় দেখা যায়, পাহাড় কাটার ঘটনায় কিছু শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রকৃত মালিকরা আইনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।

এবার সেই ধারা বদলানোর ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।

আমাদের করণীয় কী

পরিবেশ রক্ষা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। যদি আমরা চুপ থাকি, তাহলে পাহাড় কাটা চলতেই থাকবে এবং একসময় আমাদের চারপাশের সবুজ প্রকৃতি হারিয়ে যাবে।

যারা পাহাড় কাটার মতো অপরাধ করছে, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে জনগণকে আরও সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।

একটি সুস্থ, বাসযোগ্য পরিবেশ চাইলে আমাদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে। সরকার আইন প্রয়োগ করবে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে জনগণের তদারকিও প্রয়োজন।

শেষ কথা

পাহাড় কাটা মানে পরিবেশ ধ্বংস। পাহাড় কাটা মানে আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া। জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে হলে এই নতুন নির্দেশনাকে কার্যকর করতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল পাহাড় রক্ষা করা সম্ভব।

আপনার এলাকায় কি পাহাড় কাটা বন্ধ হয়েছে? প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে কি? আপনার মতামত জানাতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ