স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্র নাকি জীবাণুর আশ্রয়স্থল?
একটি হাসপাতালের প্রধান লক্ষ্য হলো রোগীদের সুস্থ পরিবেশে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের চিত্র যেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত। শয্যায় রোগী, আর ফ্লোরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে চিকিৎসা ও সাধারণ বর্জ্য। দুর্গন্ধে অনেক রোগী ও তাদের স্বজনদের নাক চেপে ধরতে হচ্ছে। এমনকি বাথরুম থেকে বের হওয়া দূষিত পানিও ছড়িয়ে পড়ছে ওয়ার্ডের একপাশে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে। হাসপাতালের পরিবেশ সংকট
চিকিৎসা বর্জ্যের ভয়াবহতা
চিকিৎসা বর্জ্য শুধুমাত্র অস্বাস্থ্যকরই নয়, এটি মারাত্মক সংক্রামকও হতে পারে। হাসপাতালের এসব বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, টিউমার, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, রাসায়নিক দ্রব্যসহ নানাবিধ ক্ষতিকর উপাদান। এগুলো যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা না করলে রোগীদের পাশাপাশি হাসপাতালের কর্মীরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অনিয়ন্ত্রিত চিকিৎসা বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে, বিশেষ করে সংক্রমণজনিত রোগ যেমন- হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি এবং এইচআইভি। অথচ, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে দেশে নির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
হাসপাতালের দায়িত্ব ও ব্যর্থতা
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার দাবি করলেও বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত ঝাড়ু দিলেও বর্জ্য এক কোণায় স্তূপ করে রেখে যান, যা পরে আরও বড় সমস্যা তৈরি করে। ওয়ার্ডের মধ্যে ময়লা জমে থাকাটা কোনোভাবেই কাম্য নয়, কারণ এটি সংক্রমণের প্রধান উৎস হয়ে উঠতে পারে। হাসপাতালের পরিবেশ সংকট
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা যদি আরও সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়েন, তবে এটি শুধুই অব্যবস্থাপনা নয়, বরং এটি জনস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে একপ্রকার অন্যায়। হাসপাতালের উচিত প্রতিটি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা এবং কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা।
সমাধান কী?
এই সমস্যার সমাধানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:
- নিয়মিত মনিটরিং ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে।
- বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ: চিকিৎসা বর্জ্য পৃথকভাবে সংরক্ষণ ও যথাযথ পদ্ধতিতে নিষ্পত্তির জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।
- জীবাণুনাশক ব্যবস্থা: হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জীবাণুনাশক ব্যবস্থা কার্যকর করা দরকার, যাতে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে না পড়েন।
- সচেতনতা বৃদ্ধি: রোগী, স্বজন এবং হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারে।
শেষ কথা
একটি হাসপাতাল মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করার জায়গা, রোগ ছড়ানোর স্থান নয়। শয্যায় রোগী রেখে ফ্লোরে বর্জ্যের স্তূপ তৈরি হলে তা শুধু হাসপাতালের নয়, গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থারই ব্যর্থতা। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে এটি আরও বড় স্বাস্থ্য সংকট তৈরি করতে পারে।
আপনার অভিজ্ঞতা কী? আপনি কি কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন? কমেন্টে জানান এবং সচেতনতা বাড়াতে শেয়ার করুন!