26.6 C
Bangladesh
মঙ্গলবার, জুন ২৪, ২০২৫
spot_img

মুনলাইপাড়া: পাহাড়ের কোলঘেঁষা এক পরিচ্ছন্নতার স্বর্গ

একটি ব্যতিক্রমী পাহাড়ি গ্রাম

বান্দরবানের রুমা উপজেলার একটি সাজানো-গোছানো গ্রাম মুনলাইপাড়া, যা পরিচ্ছন্নতার জন্য দেশের মধ্যে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। ছোট্ট এই পাহাড়ি জনপদ শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, এর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ ও সৌন্দর্যের জন্যও প্রশংসিত। প্রতিটি ঘরের সামনে রয়েছে ফুলের বাগান, যা এই গ্রামকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

পর্যটন কেন্দ্র বগালেকের পথে অবস্থিত এই গ্রাম ইতোমধ্যে পরিচ্ছন্নতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখানকার মানুষজন একত্রে গ্রামটিকে পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ব্যয় করেন। তাদের ঐক্য ও সচেতনতা মুনলাইপাড়াকে দেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটি করে তুলেছে।

পরিচ্ছন্নতার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

এই গ্রামের পরিচ্ছন্নতা কোনো সাম্প্রতিক উদ্যোগ নয়, বরং এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। এখানকার মানুষ বিশ্বাস করে যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ শুধু বসবাসের জন্য নয়, বরং এটি জীবনের মান উন্নয়নেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিটি বাড়ির সামনে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান রাখা হয়, এবং গ্রামের সবাই নিজ নিজ বাড়ির আঙিনা নিয়মিত পরিষ্কার রাখেন।

গ্রামের এক নারী জানান, সংসারের কাজের ফাঁকে তারা প্রতিদিন অন্তত ত্রিশ মিনিট গ্রাম পরিষ্কারে সময় দেন। ছোটবেলা থেকেই তারা দেখে আসছেন, এই রীতি পরিবার থেকে পরিবারে প্রবাহিত হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা শুধু শারীরিক নয়, এটি তাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পর্যটন ও বর্তমান সংকট

মুনলাইপাড়া শুধু পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। এখানকার ইকো-ট্যুরিজম, পাহাড়ি রান্না, ট্রেকিং, কায়াকিং, এবং দেশের দীর্ঘতম জিপ লাইনের কারণে দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুরা এখানে ভিড় করেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গ্রামবাসীরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। আগে যেখানে গ্রামে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ও হোম স্টে ছিল, এখন তার অনেকগুলোই বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটন নির্ভরতা বেশি থাকায় এই পরিবর্তন গ্রামবাসীদের জীবনে বড় প্রভাব ফেলছে।

পানির সংকট ও পরিবেশের চ্যালেঞ্জ

পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পানির অভাব। গ্রামের মূল সৌন্দর্য বাড়ানো ফুলের গাছগুলো রুক্ষ হয়ে পড়েছে, কারণ প্রয়োজনীয় পানি নেই। শুধু গাছ নয়, গ্রামবাসীরাও দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না।

স্থানীয় কমিটির পক্ষ থেকে পানির সমস্যা সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদী কোনো ব্যবস্থা না নিলে গ্রামের পরিচ্ছন্নতা ও জীবনের মান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

নিরাপত্তা ও সামাজিক বন্ধন

এই গ্রামে এক ব্যতিক্রমী সামাজিক রীতি প্রচলিত। এখানকার বাসিন্দারা ঘর তালাবদ্ধ করেন না, কারণ চুরি হওয়ার কোনো ভয় নেই। প্রতিবেশীরা একে অপরের ঘর পাহারা দেন, যা তাদের পারস্পরিক বিশ্বাস ও বন্ধনের প্রতিফলন।

এটি শুধু পরিচ্ছন্নতার দৃষ্টান্তই নয়, বরং গ্রামবাসীদের একতাবদ্ধ থাকার চিত্রও তুলে ধরে। তাদের বিশ্বাস, একে অপরের পাশে থাকলেই শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন সম্ভব।

পরিবেশ রক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

মুনলাইপাড়া শুধু একটি পরিচ্ছন্ন গ্রাম নয়, এটি পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এখানকার মানুষ নিজেদের চারপাশের প্রকৃতিকে সম্মান করে এবং সেটিকে সুন্দর রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।

কিন্তু পানির অভাব, পর্যটনের স্থবিরতা ও সরকারি সহযোগিতার অভাবে এই গ্রাম এখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। যদি যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে মুনলাইপাড়া শুধু দেশের নয়, বরং বিশ্বের পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব গ্রামের একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।

শেষ কথা

মুনলাইপাড়ার মতো একটি গ্রাম টিকিয়ে রাখা শুধু এখানকার বাসিন্দাদের দায়িত্ব নয়, বরং এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। এই ধরনের গ্রাম আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা ও পর্যটনের টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আপনার কী মনে হয়? এই ধরনের উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত? মন্তব্যে আপনার মতামত জানান এবং পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে আরও জানার জন্য আমাদের পেজটি ফলো করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ