চট্টগ্রামে ৩৬ মেগাওয়াট ওয়েস্ট-টু-এনার্জি (WtE) প্রকল্পের বাস্তবায়ন শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। গত ১৭ মার্চ ২০২৫, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন ডিপি ক্লিনটেক ইউকে এবং ইমপ্যাক্ট এনার্জি গ্লোবাল লিমিটেড কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধিরা সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকের পর মেয়র প্রকল্পটির বাস্তবায়নে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন, যা শুধু চট্টগ্রামের পরিবেশগত উন্নয়ন নয়, দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বর্জ্য হতে ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প
প্রকল্পের লক্ষ্য ও সম্ভাবনা
ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্রযুক্তি এমন একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি যেখানে শহরের বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। এ ধরনের প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা, যাতে কয়লা বা অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমে যায়। চট্টগ্রাম শহরের মতো জনবহুল এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন শহরের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ডিপি ক্লিনটেক ইউকের প্রতিনিধি ম্যাটিও মোলেনা প্রকল্পটির প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরেন, যা প্রমাণ করে এই প্রকল্প শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, চট্টগ্রামের অর্থনীতির জন্যও একটি বড় সুযোগ হতে চলেছে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগের (FDI) মাধ্যমে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) মডেলের আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ঘটাবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন
চট্টগ্রামের বর্তমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিস্থিতি বেশ চ্যালেঞ্জিং। প্রতি দিন শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যা সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না হলে তা পরিবেশগত সংকট সৃষ্টি করতে পারে। ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্রকল্প এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করবে এবং জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এতে শহরের বর্জ্য সমস্যার সমাধান হবে এবং একই সাথে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস তৈরি হবে। বর্জ্য হতে ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প
প্রকল্পটির মাধ্যমে দৈনিক ৩,০০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে এবং তা থেকে ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, যা চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে, দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার উপর চাপ কমবে এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে।
পরিবেশগত প্রভাব
চট্টগ্রামে এই ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্রকল্পটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হচ্ছে এটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। চট্টগ্রামের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে, যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম অপর্যাপ্ত, সেখানে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বর্জ্য কমানোর পাশাপাশি পরিবেশে ক্ষতিকারক গ্যাসের পরিমাণও হ্রাস পাবে। পাশাপাশি, এই প্রকল্পটি পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব কমাতে সহায়ক হবে।
চট্টগ্রামের বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে, শূন্য থেকে বর্জ্য সৃষ্টি হওয়ার মতো এক মাইলফলক তৈরি হবে, যা অন্যান্য শহরের জন্যও একটি মডেল হতে পারে। এই প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG) এবং নবায়নযোগ্য শক্তি নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং বিনিয়োগের সুযোগ
এ প্রকল্পের মাধ্যমে যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে তা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। প্রথমে ১০০% বিদেশি বিনিয়োগ দ্বারা এটি বাস্তবায়িত হবে, যা দেশের বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সাহায্য করবে। এছাড়া পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) মডেল এই প্রকল্পকে আরও টেকসই করবে, কারণ এতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ থাকবে।
প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যা স্থানীয় জনগণের আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাধন করবে। এছাড়া স্থানীয় প্রযুক্তি এবং প্রকৌশল ক্ষেত্রেও উন্নয়ন হবে, কারণ বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে স্থানীয় কোম্পানিরাও নতুন প্রযুক্তি এবং দক্ষতা শিখতে পারবে।
মেয়রের ভূমিকা এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনা
মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন প্রকল্পটির বাস্তবায়নে তাঁর পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন, যা প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। তিনি জানান, এই প্রকল্পটি চট্টগ্রামের পরিবেশ এবং অর্থনীতি উভয়ের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দ্রুত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে একযোগে কাজ করবে।
এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ, কারণ পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি, এই প্রকল্পটি দেশের নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
উপসংহার
চট্টগ্রামের ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্রকল্পটি শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের অংশ হিসেবে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পরিবেশের সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন — এই তিনটি ক্ষেত্রেই এটি একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এজন্য চট্টগ্রামের এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের অন্য শহরগুলোর জন্যও একটি উদাহরণ হতে পারে, যা পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ডিপি ক্লিনটেক ও ইম্পেক্ট এনার্জি গ্লোবাল লিমিটেড কে ধন্যবাদ, এমন একটা যুগোপযোগী উদ্যোগেের জন্য। সফল হোক, শুভ কামনা।
বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন(SDG), পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি শহরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আনয়নে ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই প্রকল্পটি সুদূরপ্রসারী অবদার রাখতে পারে। ধন্যবাদ সন্মানিত মেয়র মহোদয়কে যিনি চট্রগ্রামবাসি তথা দেশের প্রয়োজনে ওয়েষ্ট টু এনার্জী প্রকল্পকে জোরালো সমর্থন দিয়েছেন । ইহাতে তাঁর দক্ষতা ও দেশপ্রেমের পরিচয় বহন করে। দেশের বড় বড় শহরগুলোতে এধরনের প্রকল্প স্থাপন ও বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার দ্রুত উদ্যোগ গ্রহন করলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।