26.8 C
Bangladesh
সোমবার, জুন ২৩, ২০২৫
spot_img

ঢাকার ভাগাড়ে আগুন: আমিনবাজার থেকে মাতুয়াইল পর্যন্ত ভয়াবহ চিত্র

ঢাকা শহরের প্রতিদিনের দৃশ্য, বিশেষ করে সকালে, আমাদের চোখে পড়তে থাকে ময়লার ভাগাড়ে আগুন জ্বলতে। এটি কেবল একটি সাধারণ দৃশ্য নয়; এটি আমাদের শহরের বায়ু এবং জলবায়ু ব্যবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে। শহরের বিভিন্ন ভাগাড়ে যেমন আমিনবাজার ও মাতুয়াইল, পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা হয়। কিন্তু, এর ফলে কী ঘটছে? এর প্রভাব কি কেবল পরিবেশেই সীমাবদ্ধ, না এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি? ঢাকার ভাগাড়ে আগুন

ময়লা পোড়ানোর সমস্যার বাস্তবতা

ঢাকার বিভিন্ন ময়লার ভাগাড়ে দেখা যায়, প্রতিদিন অন্তত ২০টি জায়গায় আগুন জ্বলছে। বেশিরভাগ সময় এগুলো শহরের বাইরে, কিন্তু ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই অদৃশ্য বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে, আমিনবাজার ও মাতুয়াইলের ভাগাড়ে আগুন লাগানোর ঘটনাগুলি নতুন নয়। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানান, ময়লা পোড়ানোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, বর্জ্যের পরিমাণ কমানো, যাতে ময়লা দ্রুত সেগুলি সরিয়ে নেওয়া যায়।

এতে প্লাস্টিকজাতীয় আবর্জনা পুড়ে ছাই হয়ে যায়, যা প্রথম দৃষ্টিতে সমস্যার সমাধান মনে হলেও বাস্তবে এটি পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বায়ু দূষণের ভয়াবহতা

বায়ুদূষণের কারণে ঢাকার অবস্থান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দূষিত শহরের তালিকায়। ২০২৪ সালে, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণে বাংলাদেশ ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে, আর ঢাকা ছিল তৃতীয়। উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য পোড়ানোর ফলে এই দূষণ আরও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বায়ুদূষণে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা পোড়ানোর অবদান প্রায় ১১%। ঢাকার ভাগাড়ে আগুন

বর্জ্য পোড়ানোর স্বাস্থ্যঝুঁকি

বর্জ্য পোড়ানোর কারণে বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মিশে যায়, যেমন ডাই-অক্সিন, ফুরান, পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। এগুলি শ্বাসতন্ত্রের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে এবং শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের রোগ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, এবং অন্যান্য গ্যাসের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বাড়ে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে ৭৮,০০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সুতরাং, এই ধ্বংসাত্মক পরিবেশগত প্রভাব আমাদের জীবনকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে।

সরকারের পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতা

এতোদিন ধরে বর্জ্য পোড়ানোর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে অবহেলা থাকলেও, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি বর্জ্য পোড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব বর্জ্য পোড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে,” কিন্তু বাস্তবে, এখনো এই পরিস্থিতি তেমন পরিবর্তিত হয়নি।

এছাড়া, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিথেন গ্যাসের কারণে আগুন জ্বলে উঠতে পারে, কিন্তু সঠিকভাবে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না হওয়া পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থাকবে। ঢাকার ভাগাড়ে আগুন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন: সমস্যা এবং সম্ভাবনা

ঢাকা শহরের জন্য একটি কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। আমিনবাজারের ৫২ একর আয়তনের ভাগাড়ে প্রায় ৯০ ফুট উঁচু বর্জ্য স্তূপ জমে রয়েছে, যা শুধু পরিবেশের জন্য নয়, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও এক বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি প্রকল্প নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা হলেও, প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অথচ এই প্রকল্পটি চালু হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত হতে পারে এবং বর্জ্য পোড়ানো কমে আসতে পারে।

নতুন পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা

বর্জ্য পোড়ানোর বিপদ প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরও দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি, শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে। নগরবাসীদের উচিত এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সরকারের কাছে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানানো।

ময়লা পোড়ানোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০২২ অনুসারে, রাস্তা, সড়ক বা মহাসড়কের পাশে ময়লা পোড়ানো নিষিদ্ধ। এর জন্য দুটি বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, এই আইন কতটা কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ময়লা পোড়ানোর ব্যাপারে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

শেষ কথা

ঢাকা শহরের পরিবেশ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে যদি এই অস্থির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়। ময়লা পোড়ানো কেবল একটি ছোট সমস্যার সূচনা নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য এক বড় হুমকি। এখন সময় এসেছে একটি টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলার, যাতে আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শহর পেতে পারি।

আমাদের কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত?

এখন আপনার পালা, আপনি কি বর্জ্য পোড়ানোর বিপদ সম্পর্কে সচেতন? আমরা কি সবাই মিলে একসাথে এই সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারি? আপনার মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ