দক্ষিণ এশিয়ার নদ-নদী ও সমুদ্র রক্ষায় বাংলাদেশের উদ্যোগ
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সংকটের প্রেক্ষাপটে প্লাস্টিক দূষণ এখন এক অতি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার নদ-নদী ও সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্যের অবাধ প্রবাহ জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই সংকট মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জোরালো আহ্বান
গত সোমবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ‘প্লাস্টিক-ফ্রি রিভার্স অ্যান্ড সীজ: এ ভিশন ফর সাউথ এশিয়া রিজিওনাল রাউন্ডটেবিল’–এর উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় এই আহ্বান জানান বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। ‘পলিসি অ্যান্ড রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জেস অব ম্যানেজিং প্লাস্টিক ওয়েস্ট’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নদী ব্যবস্থার আবাসস্থল। এখানকার নদী ও জলাধার গুলিতে সীমান্ত পেরিয়ে এসে প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবন-জীবিকা।
ড. ফারহিনা আহমেদ মনে করেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত আঞ্চলিক কৌশল। এই কৌশলে থাকতে হবে পারস্পরিক সহযোগিতা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং টেকসই অর্থায়নের ব্যবস্থা। তিনি উল্লেখ করেন, প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো- অপ্রতুল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা, দুর্বল আইন বাস্তবায়ন এবং তথ্য আদান-প্রদানের সীমাবদ্ধতা। এ সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের জোরালো আহ্বান
দক্ষিণ এশীয় প্লাস্টিক কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ড. ফারহিনা আহমেদ একটি দক্ষিণ এশীয় বহু খাতভিত্তিক প্লাস্টিক কর্মপরিকল্পনা গঠনের প্রস্তাব দেন। এই পরিকল্পনার মধ্যে থাকবে সমন্বিত নীতি গ্রহণ, প্লাস্টিক উৎপাদন হ্রাসে অভিন্ন মানদণ্ড নির্ধারণ এবং গ্লোবাল প্লাস্টিকস চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে বর্জ্য সংগ্রহ, আলাদা করা ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের জন্য যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি উদ্ভাবনী প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক ধাপে ধাপে বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে নিরাপদ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিকল্প ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে।
পরিবেশ সচিব আঞ্চলিক প্লাস্টিক ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি হটস্পট পরিষ্কারের কর্মসূচি গ্রহণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আমাদের অঞ্চল উপযোগী গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে স্থানীয় সমস্যার নির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বের করা যায়। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে এবং ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের জোরালো আহ্বান
শিল্পকারখানার ভূমিকা এবং ইপিআর মডেল
ড. ফারহিনা আহমেদ তার বক্তব্যে এক্সটেন্ডেড প্রোডিউসার রেস্পন্সিবিলিটি (ইপিআর) মডেলের ওপর বিশেষ জোর দেন। এই মডেলের আওতায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আর্থিক ও কারিগরি দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, পৃথক পৃথক দেশের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে সমন্বিত ও সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই সম্ভব হবে একটি প্লাস্টিকমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তোলা।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ
এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় বাংলাদেশের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ড. ফারহিনা আহমেদ। দলের অন্য সদস্যরা হলেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শামীমা বেগম এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক রাজিনারা বেগম।
বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। সকলের উদ্দেশ্য ছিল একটাই—প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে আঞ্চলিক সমন্বিত উদ্যোগ গড়ে তোলা।
শেষ কথা
পরিবেশ রক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে প্লাস্টিক দূষণ একটি সীমান্তহীন সমস্যা। একক দেশ দ্বারা এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বাংলাদেশ তার পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে—এখনই সময় সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার। একত্রিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই গড়ে উঠতে পারে প্লাস্টিকমুক্ত, পরিবেশবান্ধব একটি দক্ষিণ এশিয়া।
Call-to-Action (CTA)
আপনিও কি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত? প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন। পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের খবর পেতে আমাদের ব্লগটি সাবস্ক্রাইব করুন। আসুন, একসঙ্গে গড়ে তুলি প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ।